কফির ইতিহাস: অজানা মজার কিছু তথ্য

কফি আবিষ্কারের সাথে মুসলমানদের নাম জড়িয়ে ছিল, তার ওপর এটি খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত পবিত্র পানীয়ের জায়গা দখল করে নিচ্ছিল। তাই কট্টর ক্যাথলিকেরা একে 'শয়তানের তিক্ত আবিষ্কার' বলে ডাকত। কিন্তু তখনকার পোপ কফির স্বাদ নিয়ে বলেন, 'শয়তানের পানীয়' তো দেখছি দারুণ সুস্বাদু, আমাদের উচিত এটা দিয়ে ব্যাপটাইজ করা, তাহলে হয়তো স্বয়ং শয়তানকেই ধোঁকা দেয়া যাবে!

বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা বাণিজ্যশিল্প হলো কফি। আধুনিক ডায়েটের একটি প্রধান অংশ এই কফি ছাড়া অনেকের যেমন দিন শুরু হয় না, তেমনি অনেকের রাত জাগাও সম্পূর্ণ হয় না। আধুনিক দুনিয়ায় কফির সবচেয়ে বড় ভোক্তা উত্তর আমেরিকা। ইউরোপ, আমেরিকার আদলে বিভিন্ন দেশে হাজারো কফিশপ নির্মিত হয়েছে, সেখানে লাখো মানুষ কফি পান করছে প্রতিদিন। কিন্তু আপনি কি জানেন, কফি সর্বপ্রথম আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয় ইথিওপিয়ার এক মেষপালককে?

কফির আজকের জনপ্রিয়তার পথটি কিন্তু সুগম ছিল না। ক্যাথলিক খ্রিস্টানেরা প্রথমে তীব্র বিরোধিতা করে একে বলতেন ‘ড্রিংক অফ দ্য ডেভিল’, অর্থাৎ শয়তানের পানীয়। এমনকি একসময় নারীবাদীরা একে ‘গন্ধযুক্ত নোংরা কাদাপানি’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। আমাদের আজকের এই লেখায় তুলে ধরা হবে কফি প্রচলনের পেছনে এই ধরনের মজার কিছু ঘটনা। 

উত্তেজিত ছাগলদের কারণেই কি প্রথম আবিষ্কৃত হয় কফি?

নবম শতকে ইথিওপিয়ায় বাস করতো খালদি নামের এক নিঃসঙ্গ মেষপালক। অন্যান্য দিনের চেয়ে তার ছাগলের পালের দুরন্তপনা একটু বেড়ে গেছে বলে মনে হলো তার। অনুসন্ধান করতে গিয়ে সে খেয়াল করে, লাল জামের মতো একটি ফল খাচ্ছে তার ছাগলেরা। ধর্মপ্রাণ খালদি সাথে সাথে সেই ফলটি নিয়ে হাজির হয় স্থানীয় মসজিদের ইমামের কাছে। কাঁচা খাওয়া অসম্ভব দেখে ইমাম আগুনে ছুঁড়ে দিলেন ফলগুলোকে। তার কাছে প্রথমে এগুলোকে শয়তানের প্রলোভন বলে মনে হয়েছিল। কিছুক্ষণ পরেই আসতে লাগলো দারুণ সুঘ্রাণ, যা আজ জগদ্বিখ্যাত। ইমামের ছাত্ররা চিন্তা করে দেখলেন, সিদ্ধ করে খেলে কেমন হয়। যে-ই ভাবা সেই কাজ, রোস্ট করা বীজগুলোকে নিয়ে এক কড়াই গরম পানিতে সিদ্ধ করা হলো। এভাবেই তৈরি হয় পৃথিবীর প্রথম কাপ কফি।

কফির উৎপত্তিস্থল; Source: plantationblue.com

ইমাম এবং তার শিষ্যরা চমৎকৃত হয়ে আবিষ্কার করলেন, এই পানীয়টি খেয়ে তারা রাতে ঘন্টার পর ঘন্টা জেগে থাকতে পারছেন। প্রার্থনার জন্য ব্যাপারটি বেশ কার্যকরী মনে হলো তাদের। দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়লো গরম পানীয়টির সুনাম।

নাকি ইয়েমেনের কোনো এক সুফিই প্রথম নিয়েছিলেন কফির স্বাদ?

অনেকে আবার বলেন, ইয়েমেনের এক সুফি সাধকই কফি আবিষ্কার করেছিলেন। তার নাম ঘোতুল আব্দুল নুরুদ্দীন আবুল আল-হাসান আল-সাদিলি। ইথিওপিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। সুন্দর একটি পাখিকে অজানা লাল রঙের একটি ফল খেতে দেখে কৌতুহলী হয়ে নিজেও চেখে দেখেন সেটাকে। আগের কাহিনীর মতোই দারুণ তরতাজা অনুভব করেন।

কফির ফল খাচ্ছে নীল ট্যানাজার পাখি; Source: Habla Ya Spanish Schools

তৃতীয় আরেকটি উপকথাও আছে কফির আবিষ্কারকে ঘিরে। অনেকে বলেন, ওমর নামে ইয়েমেনেরই একজন শেখ প্রথম আবিষ্কার করেন কফির গাছকে। প্রার্থনার মাধ্যমে অসুস্থকে সুস্থ করার খ্যাতি ছিলো তার। নিজের জন্মভূমি মোকা থেকে তাকে নির্বাসন দেয়া হয়েছিল ওসাবের মরুভূমিতে। একদিন ক্ষুধার তাড়নায় ঘুরতে ঘুরতে তিনি কফিগাছের সন্ধান পান। মুখে দিয়ে তিতা লাগায় তিনি ফলগুলোকে পোড়াতে থাকেন। কিন্তু তাতে সেগুলো আরো শক্ত হয়ে যায়। পরে সেগুলোকে পানিতে মেশালে দারুণ সুগন্ধ ছড়ায় চারপাশে। এই পানীয় দারুণ শক্তি যুগিয়েছিল তাকে। এমনিভাবে তিনিই হয়তো বা পৃথিবীর প্রথম কাপ কফিতে চুমুক দিয়েছিলেন। 

এই আবিষ্কারের কথা মোকাতে পৌঁছালে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। নতুন এই পানীয় খেয়ে ক্লান্তি, অবসন্নতাকে দমিয়ে সতেজ বোধ করেন সবাই। ফলে কফির নাম দেয়া হয় ‘মিরাকল ড্রাগ’। আর ওমরকে দেয়া হয় ‘সন্ত’ উপাধি। 

কফি কি পাপ ডেকে আনে? 

১৪৭৫ সালে তুরস্কের কনস্টান্টিনোপলে পৃথিবীর প্রথম কফি হাউজ চালু করা হয়। মুসলমানদের আবিষ্কার হলেও অনেক মুসলমান রাষ্ট্রে কফিকে বাঁকাচোখে দেখা হতো। ১৫১১ সালে মক্কার পণ্ডিতেরা কফি খাওয়া নিষিদ্ধ করেন। তৎকালীন মক্কার গভর্নর খায়ের বেগ মনে করতেন, কফির আড্ডায় জনগণের চাপা রোষ জেগে উঠবে। ফলে তার সরকারের পতন ঘটবে। জোর করে কফিকে হারাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু কফি আসলেই বিষাক্ত কি না, তা নিয়ে মতভেদ ছিলো। প্রায় তেরো বছর এ নিয়ে ঝামেলা লেগে থাকে।

অবশেষে, ১৫২৪ সালে ওসমানীয় সুলতান প্রথম সেলিম ফতোয়া জারি করে কফি খাওয়া আবার চালু করেন। খায়ের বেগকে অবৈধ কার্যকলাপের জন্য ফাঁসি দেওয়া হয়। এরপরে ১৫৩২ সালে কায়রোতে কফি খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তখন সেখানকার সব কফিহাউজ ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হয়েছিল।

গরম গরম কফি; Source: isock

ষোড়শ শতকের মধ্যেই সিরিয়া, তুরস্ক, পারস্য, মিশরের মতো দেশগুলোতে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠলো কফি। ভিনদেশীরা একে বলতো ‘আরবের ওয়াইন’। যখন পবিত্র নগরী মক্কায় হজ্জ্বের উদ্দেশ্যে প্রতি বছর লাখো মুসলিমের সমাবেশ হতো, তখন ইথিওপিয়া থেকে কফির বীজ এনে বণিকেরা রমরমা ব্যবসা করেন মুসলমানদের কাছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লীদের রাত জেগে সাধনা করার পেছনে কফি দারুণ ভূমিকা রাখতো।

মধ্যপ্রাচ্য থেকে খুব দ্রুতই এর জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে বলকান, ইতালী থেকে শুরু করে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে। পশ্চিমে আমেরিকা এবং লাতিন আমেরিকায় কফির প্রচলন ঘটায় ডাচেরা। ১৭২০ সালে লাতিন আমেরিকায় কফির আবাদ শুরু হয়।ইন্দোনেশিয়া ছাড়িয়ে প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও দ্রুতই সবার নজর কাড়ে কফি। 

কফির কাপ? নাকি শয়তানের পেয়ালা?

ইউরোপে পৌঁছাতে কফির খুব বেশিদিন সময় লাগেনি। ইতালীর ভেনিসে হরেক রকমের পণ্য বাণিজ্য করতে এসে ভূমধ্যসাগরীয় নাবিকেরা নিয়ে এসেছিলেন কফিকেও। সেটি ছিল ১৬১৫ সাল। প্রথমে অবশ্য মধ্যপ্রাচ্য এবং তুরস্কের মতো ইউরোপেও একে একটু সন্দেহের চোখে দেখা হতো। কফি আবিষ্কারের সাথে মুসলমানদের নাম জড়িয়ে ছিল, তার ওপর এটি খ্রিস্টানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত পবিত্র পানীয় রেড ওয়াইনের জায়গা দখল করে নিচ্ছিল। তাই কট্টর ক্যাথলিকেরা একে ‘শয়তানের তিক্ত আবিষ্কার’ বলে ডাকতো। যেকোনো অনুষ্ঠানে এর ব্যবহারের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

কিন্তু ঠেকিয়ে রাখা যায়নি এর জনপ্রিয়তাকে। রহস্যময় প্রাচ্য পরিভ্রমণ করে বেড়ানো ইউরোপিয়ান পর্যটকেরা কারো তোয়াক্কা না করেই এর গুণগান করতে থাকলেন। এই নিয়ে দুই পক্ষের বিবাদ লেগে গেলে এগিয়ে আসেন তৎকালীন পোপ অষ্টম ক্লিমেন্ট। তিনি কফির স্বাদ নিয়ে মুগ্ধ হয়ে যান। ঘোষণা দেন, কফি কেবল মুসলমানদের একার নয়, খ্রিস্টানদেরও পানীয়! রসিক পোপ বলেন,

“‘শয়তানের পানীয়’ তো দেখছি দারুণ সুস্বাদু। আমাদের উচিত এটা দিয়ে ব্যাপটাইজ করা, তাহলে স্বয়ং শয়তানকেই ধোঁকা দেয়া যাবে!”

পোপ অষ্টম ক্লিমেন্ট; Source: Hulton Archive/Getty Images

তারপর থেকে কফিকে কিছুটা প্রশংসাসূচকভাবেই ‘শয়তানের পানীয়’ কিংবা ‘শয়তানের পেয়ালা’ নামে ডাকা হয়।

সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি কফি আসে ‘চায়ের রাজ্য’ যুক্তরাজ্যে

ব্রিটেনের বিখ্যাত ন্যাভাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর স্যামুয়েল পেপিসের ডায়েরি থেকে সেখানকার প্রথম কফি হাউজের কথা জানা যায়। ১৬৫০ সালে জ্যাকব নামের এক ইহুদী ভদ্রলোক প্রথম কফি হাউজ চালু করেন। অক্সফোর্ডের দ্য অ্যাঞ্জেল ইন দ্য পেরিশ অফ সেন্ট পিটার্সের সেই ভবনটিই বর্তমানে ‘দ্য গ্র্যান্ড ক্যাফে’ নামে পরিচিত। পাসকোয়া রোজি নামক এক গ্রিক ব্যক্তি লন্ডনের প্রথম কফিহাউজটি নির্মাণ করেন ১৬৫২ সালে।

ভারতবর্ষে চায়ের প্রচলন ব্রিটিশদের কারণে হলেও কফির প্রচলন কিন্তু ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আসার বহু আগেই হয়েছিল। ১৬৭০ সালে বাবা বুদান নামের একজন ভারতীয় সাধু প্রথম কফির বীজ নিয়ে আসেন দক্ষিণ ভারতে। সেখান থেকেই তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা ভারতবর্ষে। তবে এখনো এই অঞ্চলের মধ্যে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতেই কফির বেশি ফলন হতে দেখা যায়। বাংলাদেশ এখনো পর্যন্ত বাণিজ্যিকভাবে কফি উৎপাদন করেনি, তবে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় চেষ্টা করা হচ্ছে।

কফি হাউজই ছিল তখনকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম

নস্টালজিয়া জাগিয়ে তোলার কারণে দারুণ জনপ্রিয় মান্না দের “কফি হাউজের সেই আড্ডাটা” গানটির পেছনে লুকিয়ে আছে এক ঐতিহাসিক সত্য। ছাত্র-শিক্ষক, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী মানুষদের জন্য কফি হাউজগুলো ছিলো ইন্টারনেটের মতো। ডাচদের সাথে ঠাণ্ডা যুদ্ধ, ধূমকেতুর আগমন কিংবা প্লেগের আশঙ্কা; এ ধরনের খবরগুলো কফি হাউজ ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যেত না।

১৬৭৫ সাল নাগাদ কেবল ইংল্যান্ডেই তিন হাজারের ওপর কফি হাউজ নির্মিত হয়। কোনো কোনোটাতে এমনকি রাতে থাকা-খাওয়ারও ব্যবস্থা ছিলো। অনেকেই তুর্কি কফি হাউজগুলোর ব্যবসায়িক মডেল অনুসরণ করা শুরু করেছিল। তাদের নামগুলোও ছিল দারুণ গালভরা- ডিকেন’স ফেম, ব্ল্যাকমোর’স হেড, ওরিয়েন্টাল সিগার ডিভাইন, জেরুজালেম কফি হাউজ, মোরাত দ্য গ্রেট, সুলতানিজ কফি হাউজ ইত্যাদি।

বিপ্লবের যোগানদার

কফির প্রভাব এতটাই বেশি ছিল যে তা যেকোনো বিপ্লবের পেছনের শক্তি হিসেবে কাজ করতো। ঠিক খায়ের বেগের মতোই ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশের নেতারা এই কফি হাউজগুলো নিয়ে সতর্ক নজর রাখতেন। মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকায় বিভিন্ন ধর্মীয় বয়ানের মূল অনুষঙ্গ ছিল কফি। তুর্কি ভাষায় কফি হাউজগুলোকে বলা হতো ‘ক্বাহভেহ খানেহ’। কফির তুর্কি নাম ‘ক্বাহভেহ’ এসেছে আরবি ‘ক্বাহা’ থেকে, এর অর্থ ‘যে পানীয় ক্ষুধা নষ্ট করে’। পরে তা ইতালিয়ান ভাষায় হয়ে যায় ‘ক্যাফে’।

কফির কাপে ঝড়! Source: Hulton Archive/Getty Images

বিপ্লবীদের সংগঠিত হবার জায়গা হিসেবে এই কফি হাউজগুলো বেশ জনপ্রিয় হতে থাকে। নিত্যদিনের বিনোদনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠতে থাকে এই কফি হাউজগুলো। সেই সাথে নাচ-গান, দাবা খেলা, রাজনীতি কিংবা অন্য কোনো আলোচিত বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক, গল্পগুজব সবই চলতো সেখানে। তখন এই কফি হাউজগুলোর ডাক নাম ছিলো “স্কুল অফ দ্য ওয়াইজ”, তথা “বিজ্ঞদের পাঠশালা”।

সপ্তদশ শতকের “ভায়াগ্রা” ছিলো কফি

দারুণ জনপ্রিয় হবার পরেও এ কফিহাউজগুলোতে বারবণিতা ছাড়া অন্যান্য নারীদের প্রবেশ নিষেধ ছিল। ১৬৯৬ সালে মেয়েদের এই এই চাপা ক্ষোভ উঠে আসে ম্যারি অ্যাস্টেলের লেখনীতে। অ্যান এসে ইন ডিফেন্স অফ দ্য ফিমেল সেক্স বইতে তিনি লেখেন, কফি হাউজের বাসিন্দারা বাড়িতে থাকলেও তাদের মন পড়ে থাকে কফিতে। সংসারের প্রতি চরম উদাসীন তারা। সংবাদপত্র, ভোট কিংবা গ্যাজেটের সাথেই তাদের প্রধান সম্পর্ক। কফির আড্ডায় মজে থেকে তারা রেহাই পেয়ে যাচ্ছে নিত্যদিনের একঘেয়ে ঝামেলা থেকে। দেশের জন্য জীবন দিয়ে দিতে পারলেও নিজের পরিবারের জন্য দুই কদম এগোতে পারে না।

অ্যাস্টেলের লেখায় তখনকার সব গৃহিণীর মনের কথাই উঠে এসেছে। এক কাপ চাকে সঙ্গী করে বাসার কাজ সামলাতে ব্যস্ত থাকা এই নারীদের ভেতরকার রাগ দানা বেঁধে উঠতে থাকে। ১৬৭৪ সালে কফির বিরুদ্ধে একটি পিটিশন পর্যন্ত জারি করে নারীরা। স্ত্রীরা দাবি করে, তাদের স্বামীরা সংসারের কোনো দায়িত্বই পালন করছে না। কীসের জন্য? কেবল এক কাপ ‘নোংরা কালো তিক্ত গন্ধযুক্ত কাদাপানি’ এর জন্য।

লোভনীয় কফির আকর্ষণ মেটানো সম্ভবই বটে! Source: Mother Nature Network

অ্যাস্টেল শুধু এটুকুতেই থেমে যাননি, “আমাদের মহান পূর্বপুরুষদের এই বংশধরেরা কফিপানের মাধ্যমে নিজেদেরকে বনমানুষের বংশধর হিসেবে প্রমাণিত করেছে। এই অদ্ভুত ফলটির কারণেও তাদের ক্ষমতাও হ্রাস পেয়েছে। তারা আমাদেরকে আর আগের মতো সন্তুষ্ট করতে পারছে না!” পরবর্তীতে নারীদের পিটিশনের জবাবে পুরুষদের দেয়া বক্তব্যে অ্যাস্টেলের এই দাবিকে অবশ্য ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, ওয়াইন কিংবা ব্রাউন অ্যাল নামক মদগুলোই বরং পুরুষদের যৌনক্ষমতা কমিয়ে দেয়। কিন্তু কফি তাদের মধ্যে উদ্যমতা বাড়ানোর পাশাপাশি যৌনজীবনকে যথাযথভাবে উপভোগ করতেও সাহায্য করে।

যে গতিতে কফির প্রসারকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তার দ্বিগুণ গতিতে বেড়েছে এর জনপ্রিয়তা। বিশ্বজুড়ে কোনো পানীয়ই তাই আধুনিক যুগে কফির সাথে পাল্লা দিতে পারছে না আর।

 

Leave a Reply