ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান: শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীদের বোকা বানানোর গল্প

এই কুখ্যাত বর্ণবাদী দলের কাছ থেকেই একবার সম্মানসূচক নাইট উপাধি পেয়ে গিয়েছিলেন এক কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ অফিসার।

দাউদাউ করে জ্বলছে ক্রুশ। রাস্তা দিয়ে মিছিল করছে সাদা আলখেল্লা আর কিম্ভূতকিমাকার মুখোশ পরা একদল লোক। তাদের মুখে শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদের বুলি। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস সম্পর্কে একটু ধারণা থাকলেই বুঝতে পারবেন কাদের কথা বলা হচ্ছে। এরা হলো শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান উগ্রবাদীদের সংস্থা ‘কু ক্লাক্স ক্ল্যান’, আমেরিকার প্রথম সন্ত্রাসী সংগঠন।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের পরে দাসপ্রথা বিলুপ্ত হবার কারণেই মূলত এই গুপ্ত সংগঠনের উদ্ভব ঘটে। অনেক স্বল্পশিক্ষিত শ্বেতাঙ্গের ব্রেইনওয়াশ করে এই দলে ঢোকানো হয়। মূলত কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী সংগঠন হিসেবেই তারা পরিচিত। তবে মুসলমান, ইহুদী, অভিবাসী সবাইকেই তারা নিজেদের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করত। তারা মনে করত, হঠাৎ করেই কৃষ্ণাঙ্গ, অভিবাসী কিংবা অন্য ধর্মের মানুষেরা এসে তাদের দেশ দখল করে নিচ্ছে, তাদের জাতিকে অশুদ্ধ করে দিচ্ছে।

ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান মুভিতে কু ক্লাক্স ক্ল্যানের ক্রুশ পোড়ানোর দৃশ্য; © Focus Features

যুগে যুগে নানাভাবে বিভিন্ন হিংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়েছে তারা। শুধু তা-ই না, আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অনেক কৃষ্ণাঙ্গদেরকে জনসমক্ষে নির্মমভাবে হত্যার ইতিহাসও আছে এই কাল্টের লোকদের। কিন্তু এরকম সহিংসতার পরেও আজীবনই তাদেরকে বিচ্ছিন্ন উগ্রবাদীর দল হিসেবে দেখা হয়েছে। কখনোই তাদের সমূলে উৎপাটন করা হয়নি, বরং প্রছন্নভাবে সমর্থন জানানো হয়েছে অনেকক্ষেত্রে।

এই কুখ্যাত বর্ণবাদী দলের কাছ থেকেই একবার সম্মানসূচক নাইট উপাধি পেয়ে গিয়েছিলেন এক কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশ অফিসার। সেই অবিশ্বাস্য এবং কিছুটা মজার কাহিনী অনেকের কল্পনাকেও হার মানায়। তার এই অভিনব অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করেই স্পাইক লি বানিয়েছেন ‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান‘। বছরের অন্যতম সেরা এই চলচ্চিত্রটি নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।

‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান’ মুভির পোস্টার ; © Focus Features

সত্তরের দশকে কলোরাডো স্প্রিংস পুলিশ ডিপার্টমেন্টে যোগ দেন রন স্টলওয়ার্থ। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অফিসার হবার কারণে বেশ কিছু ক্ষেত্রে পদে পদেই বর্ণবাদের শিকার হচ্ছিলেন তিনি। নবীন অফিসার হয়েও আন্ডারকভার ইউনিটে যোগ দেন তিনি। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার আদায়ের দাবিতে গঠিত একটি সংগঠন ‘ব্ল্যাক প্যান্থার’ এর সম্মেলনে পাঠানো হয় তাকে। কিন্তু রনের কাছে এসবকে কোনো হুমকি বলে মনে হচ্ছিল না। একদিন পত্রিকায় কুখ্যাত কু ক্লাস ক্ল্যানে যোগ দেবার একটি বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে তার। কিছুটা ঝোঁকের বশেই তাদেরকে ফোন করে ফেলেন রন, শ্বেতাঙ্গ উগ্রবাদীদেরকে দারুণভাবে সমর্থনের কথা জানান তাদেরকে।

রনের সেই ফোনালাপ ; © Focus Features

তার কথা বলার ভঙ্গী ছিল ভয়াবহ রকমের বিশ্বাসযোগ্য। ক্ল্যানের স্থানীয় প্রেসিডেন্ট ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেননি যে, একজন কৃষ্ণাঙ্গ আছে ফোনের অপর পাশে। নিজেদের দল ভারি করার জন্য কিছুদিনের মাঝেই রনকে দেখা করতে বলেন তিনি। এবার রন পড়ে যান বিপদে। ডিপার্টমেন্টের অনুমতি নিয়ে তার ঘনিষ্ঠ আরেকজন আন্ডারকভার এজেন্ট ফ্লিপ জিমারম্যানকে ‘রন’ সাজিয়ে তাদের কাছে পাঠান তিনি। এভাবেই তারা তদন্তকাজ চালিয়ে যান পাক্কা সাত মাস। ব্যাপারটি যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ ছিল, কারণ এই উগ্রবাদীদের কাছে অস্ত্রশস্ত্রের কোনো কমতি ছিল না। সবকিছু জেনেও একজন আদর্শ আন্ডারকভার পুলিশ হিসেবে নিরস্ত্র হয়েই বাঘের গুহায় ঢুকতে রাজি হয়েছিলেন ফ্লিপ। এদিকে কৃষ্ণাঙ্গ ছাত্র ইউনিয়নের সাথেও জড়িয়ে পড়েন রন।

জন ডেভিড ওয়াশিংটন এবং লরা হ্যারিয়ার; © Focus Features

ক্ল্যানের সদস্যরা ঘৃণায় বুঁদ থাকলেও তাদের বুদ্ধি ছিল নিরেট, তারা দুজনের গলার স্বরের তফাত একবারও ধরতে পারেনি। এভাবে অতি সহজেই তাদের কাল্টের নাড়িনক্ষত্র জেনে ফেলেন তারা দুজন। শুধু স্থানীয় নেতা না, কু ক্লাক্স ক্ল্যানের গ্র্যান্ড উইজার্ড ডেভিড ডিউকের সাথেও একাধিকবার কথা হয় রনের। এক অনুষ্ঠানের জন্য ডেভিড ডিউক কলোরাডোতে আসার পরে আবার ভাগ্যচক্রে তার নিরাপত্তার দায়িত্ব পড়ে খোদ রন স্টলওয়ার্থের ঘাড়েই। সামনাসামনি তার কণ্ঠ শুনেও ফোনে শোনা কণ্ঠের সাথে মিলাতে পারেননি ডিউক। সুদূর কল্পনাতেও ক্ল্যানসম্যানদের মাথায় আসেনি যে, তারা একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশকে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা বানিয়ে ফেলতে যাচ্ছেন।

নিজেদের জীবনে ঝুঁকি নেয়া এই মিশনের ফলে তারা বেশ কিছু সহিংস ঘটনা প্রতিহত করতে সক্ষম হন। এছাড়াও তাদের দেয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে কেকেকের সদস্য হবার অপরাধে আমেরিকান মিলিটারির চারজন সদস্যকে বরখাস্ত করা হয়।

আসল চমক ছিল অবশ্য মুভির শেষে। সত্তরের দশক থেকে কাহিনী হঠাৎ করেই চলে আসে বর্তমানে। আমরা দেখতে পাই, যুক্তরাষ্ট্রের শার্লোটসভিলে বর্ণবাদবিরোধী র‍্যালির ওপর উগ্রপন্থীদের হামলার দৃশ্য। ২০১৭ সালের এ ঘটনায় তিনজন নিহত হয়েছিলেন, আহত হয়েছিলেন আরো অনেকে। এর মাধ্যমে পরিচালক দর্শককে বোঝালেন যে, কু ক্লাক্স ক্ল্যানের বীজ রয়ে গেছে এখনো। এরপরেই স্ক্রিনে আসেন বর্তমান আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বরাবরই অভিবাসন আইনের বিরোধীতা করা ট্রাম্পকে বলতে দেখা যায়, শার্লোটসভিলের এই ঘটনার পেছনে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদীদের কোনো ভূমিকা নেই!

মুভির প্রধান দুই অভিনেতা জন ডেভিড ওয়াশিংটন এবং অ্যাডাম ড্রাইভার; © Focus Features

মুভির প্রধান চরিত্র রন স্টলওয়ার্থের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন খ্যাতনামা অভিনেতা ডেনজেল ওয়াশিংটনের ছেলে জন ডেভিড ওয়াশিংটন। আর তার আন্ডারকভার পার্টনার ফ্লিপ জিমারম্যানের ভূমিকায় ছিলেন অ্যাডাম ড্রাইভার। এই চরিত্রের জন্য অস্কার, গোল্ডেন গ্লোব, বাফটাসহ বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। এছাড়াও গ্র‍্যান্ড উইজার্ডের ভূমিকায় অভিনয় করা টফার গ্রেসের সাথে ডেভিড ডিউকের চেহারার সাথে আশ্চর্যভাবে মিল দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই।

মুভির প্রযোজক ছিলেন গত বছরের বর্ণবাদবিরোধী স্যাটায়ার হরর ‘গেট আউট’ এর পরিচালক জর্ডান পিল। বাডি কপ মুভির আদলে সাজানো মুভিটির হাস্যকর বিদ্রূপাত্মক মুহূর্তগুলো ছিল ব্ল্যাক কমেডির উৎকৃষ্ট নিদর্শন। উগ্র চেতনাবাদের নোংরা রূপটিও যে কাউকে নড়েচড়ে বসতে বাধ্য করবে। এর সিনেমাটোগ্রাফি ছিল চমৎকার, ফ্রেমে ফ্রেমে বিভিন্ন মেটাফোরের ব্যবহার করা হয়েছে। ক্ল্যানে নতুন সদস্যদের অভ্যর্থনা জানাবার দৃশ্যটির পাশাপাশি ইন্টারকাট করে একজন নিরীহ কৃষ্ণাঙ্গকে ভয়াবহ মেরে ফেলার বর্ণনার দৃশ্যটি দেখে যে কারোরই গা শিউরে উঠবে। নতুন করে বর্ণবাদ জাগিয়ে তোলা ডব্লিউ জি গ্রিফিথের বর্ণবাদী মুভি ‘বার্থ অফ দ্য নেশন’ মুভিটির কিছু দৃশ্যও দেখানো হয়েছে এখানে।

মুভির ফ্রেমে ফ্রেমে মেটাফোরের ব্যবহার © Focus Features

মুভির সাউন্ডট্র্যাকে ‘বল অফ কনফিউশন’ নামের সত্তরের দশকের গানটির ব্যবহারও একেবারে খাপে খাপে মিলে গেছে। দুর্ভাগ্যজনক হলো, শুধু সেসময়কার ঘটনার সাথে না, বর্তমানের অস্থির সহিংস সময়ের সাথেও গানটি যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক।

২০১৮ সালের মে মাসে কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের পরে গ্রাঁ প্রিঁ পুরস্কার জিতে নেয় ‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান’। পরে শার্লোটভিলের ঘটনার ঠিক এক বছর পর আগস্টের ১০ তারিখে থিয়েটারে মুক্তি পায় মুভিটি। মাত্র ১৫ মিলিয়ন বাজেটের বিপরীতে আয় করে ৯১ মিলিয়ন ডলার। রোটেন টমাটোজে এর রেটিং ৯৬% ফ্রেশ।

৯১তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে বেস্ট পিকচার, বেস্ট ডিরেক্টর (স্পাইক লি), বেস্ট সাপোর্টিং অ্যাক্টর (অ্যাডাম ড্রাইভার), বেস্ট অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লে, বেস্ট এডিটিং এবং বেস্ট অরিজিনাল স্কোর এই ছয়টি বিভাগে মনোনয়ন পায় মুভিটি, জিতে নেয় বেস্ট অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লের পুরস্কার।

© Focus Features

এবারের অস্কারে সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত মুভিগুলোর মধ্যে ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান ছাড়াও ছিল আরো দুটি অনবদ্য মুভি- ‘বোহেমিয়ান র‍্যাপসোডি’ এবং ‘গ্রিন বুক’। কিন্তু ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান বাদে বাকি দুটোই বিতর্কের মুখোমুখি হয়েছে সঠিকভাবে সত্য উপস্থাপনে ব্যর্থতার জন্য। এদিকে ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যানের কাহিনী দেখার সময়ে অবিশ্বাস্য মনে হলেও পুরো মুভিটিই ঐতিহাসিক সত্য। শুধুমাত্র মুভির ক্লাইম্যাক্সের মুহূর্তটি ড্রামাটিক এলিমেন্ট আনার স্বার্থে কিছুটা পালটানো হয়েছে, তবে এরকম একটা বোমা বিস্ফোরণ কিন্তু আসলেই ঘটিয়েছিল কেকেকের সদস্যেরা।

স্বয়ং রন স্টলওয়ার্থ নানাভাবে উপদেশ দিয়ে সাহায্য করেছেন মুভিটি নির্মাণের সময়ে। ফোনের বিভিন্ন আলাপচারিতা কিংবা ডেভিড ডিউকের মুখোমুখি হওয়া, এই সমস্ত ঘটনাই ঘটেছিল বাস্তবে। রন স্টলওয়ার্থ ক্ল্যানের স্থানীয় শাখার প্রেসিডেন্ট হবার প্রস্তাব পাবার পরেই মূলত তাদের এই আন্ডারকভার অপারেশনের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। রন এবং তার সহযোগী অন্যান্য অফিসারদেরকে বলা হয়, এর সাথে সম্পর্কিত সকল তথ্যপ্রমাণ নষ্ট করে ফেলার জন্য। কিন্তু রন সবার অলক্ষ্যে তার জ্যাকেটের ভেতরে একটি ডায়েরি বাড়িতে নিয়ে যান। নিরাপত্তার স্বার্থে ২০০৬ সালের আগে তিনি এ বিষয়ে কোনো কথাই বলেননি কাউকে। শুধু তা-ই না, এখনো পর্যন্ত তাকে সাহায্য করা সেই শ্বেতাঙ্গ এজেন্টের নাম প্রকাশ করেননি তিনি। তার সেই ডায়েরির ওপর ভিত্তি করেই ২০১৪ সালে প্রকাশিত ‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান’ বইটি লেখা হয়।

ক্ল্যানের সেই কার্ডসহ সত্যিকারের রন স্টলওয়ার্থ; © Business Insider

ডেভিড ডিউকের ঘাড়ে হাত রাখা ছবিটি হারিয়ে ফেললেও ক্ল্যানের কাছ থেকে নাইট উপাধি পাওয়া কার্ডটি কিন্তু সবসময়ে সাথেই রাখেন রন। মজার ব্যাপার, মুভির ট্রেলার মুক্তি পাবার পর স্বয়ং ডেভিড ডিউক যোগাযোগ করেন তার সাথে। বহু বছর পরে আবার নতুন করে তাদের যে ফোনালাপটি হয়, সেটিও ছিল যথেষ্ট নাটকীয়। রনের ভাষ্যে,

ডিউক ফোন করে বললেন, “মুভির ট্রেলারে আপনি যেভাবে দেখিয়েছেন, আমি সেরকম কিছুই বলিনি। অবশ্য আমি আপনার বই এবং স্পাইক লির কাজের প্রতি সম্মান জানাই।” আমি বললাম, “আপনি যা যা বলেছেন, তা-ই আছে বইয়ে, একটুও বাড়িয়ে লিখিনি।” এছাড়াও আমরা ট্রাম্পকে নিয়ে কথা বললাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি কি ট্রাম্পকে বর্ণবাদী বলে মনে করেন?”। ডিউক বললেন, “মোটেই না, ট্রাম্প আসলে শ্বেতাঙ্গদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি রক্ষায় কাজ করতে চান। ট্রাম্প হলেন জার্মান এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান। তারাই তো আমেরিকাকে গড়ে তুলেছেন।” আমি বললাম, “আমেরিকার জন্ম হয়েছে ধনী শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা, যারা দাসপ্রথা সমর্থন করত। থমাস জেফারসনের মতো এদের অনেকেই ছিল ধর্ষক। বিশ্বাস না হলে ডিএনএ পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।” জবাব দিতে না পেরে ডিউক প্রসঙ্গ পাল্টে অন্য কথা বলা শুরু করেন।

এই ভয়ানক সংগঠনের জন্ম সেই ১৮৬৫ সালে হলেও যুগে যুগেই এদের সদস্যদের বিভিন্ন কুকীর্তির নজির দেখা গেছে। ১৯২০ সালে কু ক্লাক্স ক্ল্যানের স্বর্ণযুগে এর সদস্য ছিল চল্লিশ লাখের ওপরে। তারপর অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবংজিম ক্রো আইনের কারণে এরা কখনোই পূর্ণ শক্তি ফিরে পায়নি। কিন্তু ষাটের দশকে দলটি আবার নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে পড়। সেসময় বিভিন্ন প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাও তাদেরকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে সমর্থন দিতে থাকেন।

ডেভিড ডিউকের ভূমিকায় টফার গ্রেস © Focus Features

ডেভিড ডিউক সেরকমই একজন নেতা। সবার অভিযোগকে অগ্রাহ্য করে বরাবরেই তিনি কু ক্লাক্স ক্ল্যানকে একটি অহিংস সংগঠন হিসেবে দাবি করে গেছেন। ‘ব্ল্যাকক্ল্যানসম্যান’ এ ডিউকের উত্থানের পাশাপাশি ক্ল্যানসম্যানদের বিভিন্ন সংলাপের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সূক্ষ্ম প্যারালাল লক্ষ্য করা যায়। সরকারি উচ্চপর্যায় থেকে প্রশ্রয় না পেলে কখনোই অল্ট+রাইট, স্কিনহেড এ সকল নিও নাজি সংগঠন গজিয়ে উঠতে পারত না। সংখ্যায় অল্প হলেও এদের নৃশংসতা সবার জন্যই একটা বড় হুমকি।

এ সকল সংগঠন অসহিষ্ণুতা ছড়িয়ে দিতে চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো মানুষের অভাব নেই। মাত্র কিছুদিন আগেই জেমস হার্ট স্টার্ন নামের একজন কৃষ্ণাঙ্গ মানবাধিকার কর্মী আমেরিকার আরেকটি কুখ্যাত নিও-নাজি দলকে বোকা বানিয়ে তাদের নেতা হয়ে গেছেন! আমরা হয়তো ভবিষ্যতে তাকে নিয়ে নির্মিত বায়োপিকও দেখতে পাবো। নিজের কাজের মাধ্যমে বরাবরেই বর্ণবাদবিরোধী বক্তব্য দিয়ে থাকেন স্পাইক লি। তবে এই মুভি নির্মাণের জন্য এখনই ছিল সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।

কু ক্লাক্স ক্ল্যান সম্পর্কে আরো জানতে এই আর্টিকেলটি পড়ে আসতে পারেন:

কেকেকে: শ্বেত সন্ত্রাসের আদ্যপান্ত

Leave a Reply