সেলিব্রেটিদের নিয়ে উদ্ভট কিছু কন্সপাইরেসি থিওরি

শোনা কথায় বিশ্বাস করতে নেই, সেটা সবাই জানে। তারপরেও কিছু কন্সপাইরেসি থিওরির এমনসব বিশ্বাসযোগ্য উপস্থাপন শুনে অনেকেই বোকা বনে যেতে বাধ্য। আর সাধারণত এসব রটনার মূল শিকার হন বিখ্যাত সেলেব্রিটিরা। মিডিয়াজগতের মানুষদের নিয়ে এমনিতেই সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।

ইন্টারনেট এক মজার রাজ্য। বিভিন্ন ধরনের রটনা কিংবা কন্সপাইরেসি থিওরি ছড়িয়ে দিতে এর জুড়ি নেই। শোনা কথায় বিশ্বাস করতে নেই, সেটা সবাই জানে। তারপরেও কিছু কন্সপাইরেসি থিওরির এমনসব বিশ্বাসযোগ্য উপস্থাপন শুনে অনেকেই বোকা বনে যেতে বাধ্য। আর সাধারণত এসব রটনার মূল শিকার হন বিখ্যাত সেলেব্রিটিরা। মিডিয়াজগতের মানুষদের নিয়ে এমনিতেই সাধারণ মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।

অনেক সেলেব্রিটি আবার খ্যাতির নেশায় ইচ্ছা করেই বিচিত্র জীবনধারণের পথ বেছে নেন। আর গুজবও তখন তাদের পেছনে ছুটতে শুরু স্বাভাবিক। তারপরেও কিছু গুজব আছে, যেগুলো সব মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। আমাদের আজকের এই লেখার উদ্দেশ্য হলো, এরকম উদ্ভট কিছু কন্সপাইরেসি থিওরির সত্য-মিথ্যা বিবেচনা করা।

পপতারকা কেটি পেরির আসল নাম জন বেনেট রামসে, যার মৃত্যুরহস্য এখনো সমাধান করা যায়নি!

ইন্টারনেটের বদৌলতে এরকমই একটি থিওরি প্রচলিত আছে কেটি পেরির নামে। জন বেনেট ছিলেন মার্কিন এক শিশুশিল্পী। কলোরাডোবাসী এই বিউটি কুইনকে মাত্র ৬ বছর বয়সে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তার বাবা জন রামসে বাড়ির বেসমেন্টে তার লাশও খুঁজে পেয়েছিলেন।

কিন্তু ইউটিউবার ডেভ জনসনের দাবি, বেনেটকে আসলে খুন করা হয়নি!

তবে ডেভের কথায় গুরুত্ব না দেয়াই ভালো। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এর চেয়ে উদ্ভট অনেক থিওরি প্রমাণের চেষ্টা করেছেন তিনি। এমনকি সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা যে আসলে একজন পুরুষ, এ ব্যাপারেও লম্বা লম্বা যুক্তি দেখিয়েছেন তিনি!

জন বেনেট রামজে এবং পপতারকা কেটি পেরি; Image Source: ABC News/Youtube; Rich Fury/Getty Images

ভাবছেন, ঘটনাটি কেন মিথ্যা? ২০১০ সালে নিজের ছেলেবেলার একটি ছবি পোস্ট করেছিলেন কেটি। সেসময় অনেকেই তাদের দু’জনের চেহারার মিল নিয়ে মজা করেছিলেন। সেখান থেকেই আসলে গুজবটা ছড়িয়েছিল। বেনেটের লাশ সেই ১৯৯৭ সালেই ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, তার বেঁচে থাকার আদৌ কোনো সম্ভাবনা নেই।

জন লেননের খুনি হলেন হরর লেখক স্টিফেন কিং!

বিখ্যাত ব্রিটিশ ব্যান্ড বিটলসকে ঘিরে বহু আজগুবি কন্সপাইরেসি থিওরি আছে। অনেকের ধারণা, লিজেন্ড পল ম্যাককার্টনি সেই ১৯৬৬ সালেই মারা গেছেন। তবে সবকিছুর মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে জন লেননের হত্যাকারীর পরিচয়। অনেকের ধারণা, লেননকে খুন করেছেন জনপ্রিয় লেখক স্টিফেন কিং!

বাঁয়ে জন লেনন, ডানে স্টিফেন কিং ; Image Source: AP Photo/Marty Reichenthal

ফ্লোরিডার স্টিভ লাইটফুট নিজের শহরের কাউন্সিলের মিটিংয়ে এই কথা বলে সবার হাসির পাত্রে পরিণত হন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, চ্যাপম্যান আর কিং দেখতে একই রকম। দুই প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান এবং রিচার্ড নিক্সনের উস্কানিতেই নাকি এমনটা করেছিলেন কিং, কারণ তারা শান্তিকামিতার কারণে লেননকে দেখতে পারতেন না। এই কথার জন্য লাইটফুটকে জেলেও যেতে হয়েছিল।

তবে ঘটনাটি আসলেই রটনা ছাড়া আর কিছু নয়। চেহারায় মিল থাকলেও, স্টিফেন কিং এবং মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যান দু’জনেই ভিন্ন লোক। আর চ্যাপম্যান যে লেননের খুনি, তা বহু আগেই আদালতে প্রমাণিত হয়েছে।

আসল এমিনেমকে খুন করে গুম করেছে ইলুমিনাতি!

একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে মার্শাল ম্যাদারস তথা এমিনেম ছিলেন পৃথিবীর শীর্ষ র‍্যাপারদের একজন। কিন্তু ২০০৪ সালে এনকোর অ্যালবাম রিলিজের পর, আচমকাই সঙ্গীতজগত থেকে পাঁচ বছরের জন্য অবসর নেন তিনি। এমিনেমের মতে, এর পেছনে ভূমিকা রেখেছিল রাইটার’স ব্লক এবং মাদকাসক্তি। আবার মাদকাসক্তির কারণে ব্লক কাটিয়ে ওঠারও পথ খুঁজে পাচ্ছিলেন না তিনি।

লোডাউন ট্রুথ নামে এক ব্লগের দাবি, এমিনেমকে দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করেছিল ইলুমিনাতি চক্র। এমিনেম তাদের কথা না মানায়, ২০০৫ সালে গাড়ি দুর্ঘটনার সাহায্যে তাকে হত্যা করে তারা। তারপর তারা এমিনেমের ক্লোন তৈরি করে! আর সে কারণেই নাকি এমিনেমের গলায় আর আগের মতো তেজ নেই।

এমিনেম ; Image Source: dailyexpress.co.uk

সাধারণত বেশিরভাগ তারকাদের বিরুদ্ধে গুজব ওঠে ইলুমিনাতি সংঘে যোগ দেবার, কিন্তু ইলুমিনাতির হাতে খুন হবার গুজব এটাই প্রথম। ইলুমিনাতি একটি বিশাল সংগঠন। র‍্যাপারদেরকে মেরে বেড়ানো হয়তো তাদের পক্ষে অস্বাভাবিক নয়, কিন্তু কাজটা করে তাদের তেমন কোনো লাভও নেই। আর এমিনেমের তেজ একটুও কমেনি, ২০০৯ এ ফিরে আসার পর থেকে ভক্তদের দারুণ সব গান উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

স্ট্যানলি কুবরিকের সাথে হাত মিলিয়ে চাঁদে যাবার নকল চিত্র বানিয়েছে নাসা

অ্যাপোলো ১১ এর চাঁদে যাবার সত্যতা নিয়ে অনেকের মনেই সন্দেহ ছিল সবসময়ে। এদেরই একজন রডনি অ্যাশার, ব্যাপারটি নিয়ে আস্ত একটি ডকুমেন্টারিই বানিয়ে ফেলেছিলেন। ‘রুম টুথার্টিসেভেন’ নামের এই ডকুমেন্টারিতে অ্যাশার নিজের স্বপক্ষে বহুরকম যুক্তি দেখিয়েছিলেন। চাঁদে যাবার আগের বছরে বানানো ‘২০০১: এ স্পেস ওডিসি (১৯৬৮)’ মুভি দেখলে নাকি এর আভাস পাওয়া যায়।

তাছাড়া এর অনেক বছর পরে কুবরিকের একটি রহস্যজনক সাক্ষাৎকারও প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে কুবরিক বলেছিলেন,

“ওই পর্যায়ে পৌঁছানোটা রীতিমতো অসম্ভব।” কুবরিক আরো বলেন, “‘২০০১’ ছিল খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী এক উদ্যোগ। কিন্তু তার মানে এই না যে, নকল চন্দ্রাবতরণের বিষয়টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিল না। এ কথা সত্যি যে, ‘২০০১’ করতে গিয়ে আমি অনেক কিছু শিখেছি, সেজন্যই আমি এই কাজটির দায়িত্ব পেয়েছিলাম।”

স্ট্যানলি কুবরিক এবং চাঁদের মাটিতে নীল আর্মস্ট্রং ; Image Source: dailyexpress

এই সাক্ষাৎকারটি আসলে মোটেও সত্যি নয়।  কুবরিকের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারটির ওপর ভিত্তি করে আবার ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন ‘টি মারে’ নামের আরেক ব্যক্তি। সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে। কিন্তু দিনক্ষণ মিলিয়ে দেখা যায়, যেদিন ঐ সাক্ষাৎকারটি নেয়া হয়েছে, তার দুই মাস আগেই স্ট্যানলি কুবরিক মারা গেছেন। সুতরাং এই মানুষটি আসলে কুবরিক ছিলেন না। আর চাঁদে যাওয়ার ব্যাপারটিও কোনো ভাঁওতাবাজি ছিল না, এর স্বপক্ষে বহু প্রমাণ আগেই হাজির করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

মরিসা টমেইকে ভুল করে অস্কার দেয়া হয়েছিল

সাম্প্রতিককালে মারভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সে আন্ট মের চরিত্রে অভিনয় করে আলোচনার তুঙ্গে এসেছেন এই অভিনেত্রী। কিন্তু এর আগেও তার ক্যারিয়ার কিন্তু বেশ ভালোই সমৃদ্ধ ছিল। এমনকি ১৯৯৩ সালে মাই কাজিন ভিনি  নামের কমেডি মুভির জন্য সেরা সহঅভিনেত্রীর অস্কারটা জিতে নেন তিনি। দুর্ভাগ্যবশত, সেই অস্কারটি নিয়েই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব জেগেছিল অনেকের মনে। এই গুজবটি অবশ্য ইন্টারনেটে নয়, ট্যাবলয়েডেই ছড়িয়েছিল বেশি।

সেবছর টমেইর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন দুর্দান্ত সব অভিনেত্রী। হাওয়ার্ড’স এন্ডেরর জন্য ভেনেসা রেডগ্রেভ, ড্যামেজ  মুভির জন্য মিরান্ডা রিচার্ডসন, হাজব্যান্ডস অ্যান্ড ওয়াইফ মুভির জন্য জুডি ডেভিস এবং এনচ্যান্টেড এপ্রিলের জন্য জোয়ান প্লোরাইট; প্রত্যেকেই তাদের হেভিওয়েট পারফরম্যান্সের জন্য আলোচিত হয়েছিলেন। সেই তুলনায় টমেইকে কিছুটা ব্ল্যাক হর্স হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। পুরস্কার ঘোষণার সময়ে অভিনেতা জ্যাক প্যালেন্স কার্ডে লেখা নামটি পড়তে ব্যর্থ হন প্রথমে, পরবর্তীতে তিনি মরিসা টমেইর নাম ঘোষণা করে দেন। অনেকের ধারণা, লজ্জায় পড়ে পরবর্তীতে অস্কার কর্তৃপক্ষ আর তার ভুলটা শুধরে দেয়নি।

১৯৯৩ সালের অস্কারমঞ্চে অস্কারজয়ী মরিসা টমেই; Image Source: AP Photo/Bob Galbraith

তবে আসলে সেবার অস্কারটি মরিসা টমেইরই প্রাপ্য। অস্কারের বিভিন্ন বিভাগে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে দেখা যায় প্রায়ই। কিন্তু তাই বলে মরিসা টমেইকে অযোগ্য মনে করা একেবারেই উচিত নয়। অ্যাওয়ার্ড শোগুলোতে কমেডি মুভিগুলোকে ড্রামা মুভির চেয়ে কম প্রাধান্য দেয়া হয় বলেও অনেকে টমেইকে গোনার মধ্যে ধরেননি। কিন্তু ঐ সিনেমায় তার পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। আর কোনো ভুল হলে একাডেমি অবশ্যই সেটা শুধরে দিতো, সাম্প্রতিককালে যেমনটি করেছে মুনলাইট/লা লা ল্যান্ড নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সময়ে।

হলিউড তারকা কিয়ানু রিভস আসলে অমর

কিছু কিছু সেলেব্রিটির বয়স আসলেই বাড়ে না। অনেকেই এর পেছনের কারণ হিসেবে বহুমূল্য সব সার্জারিকে দায়ী করেন। তবে কিয়ানু রিভসের ব্যাপারটি ভিন্ন। একজন বড় মাপের তারকা হওয়া সত্ত্বেও সাদামাটা জীবনযাপন করতেই পছন্দ করেন তিনি। জীবনে ঝড়ঝঞ্ঝাও কম যায়নি তার। কিন্তু বয়স ৫৪ হলেও দেখে চেহারাকে যেন ত্রিশের কোঠাতেই আটকে রেখেছেন তিনি। ঊনবিংশ শতকের ফরাসি অভিনেতা পল মনেটের সাথেও চেহারার অনেক মিল তার। এছাড়াও ঐতিহাসিক বিভিন্ন ব্যক্তিত্বের সাথে তার চেহারার মিল খুঁজে পাওয়া গেছে।

কিয়ানু রিভস কি আসলেই অমর? ; Image Source: Keanuisimmortal.com

তাই অনেকেরই ধারণা, কিয়ানু রিভস কোনো সাধারণ মানুষ নন। তিনি আসলে অমর, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছেন। আবার অনেকের ধারণা, তিনি সময় পরিভ্রমণ করে ইতিহাস পালটে দিয়ে এসেছেন! কিয়ানু রিভসের জন্ম ১৯৬৪ সালে। দেখে বয়স বোঝা না গেলেও ভালোমতো খেয়াল করলে তার চেহারার পরিবর্তন ঠিকই ধরা যায়। ঐতিহাসিক কোনো ব্যক্তিত্বের সাথে চেহারা মিল থাকাও একেবারে অসম্ভব কিছু না।

মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের একজন বডি ডাবল আছে!

রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের বডি ডাবল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। জোসেফ স্ট্যালিন কিংবা সাদ্দাম হোসেনের বডি ডাবল থাকার কথা অনেকেই জানেন। হলিউড মুভি ‘ডেভ (১৯৯৩)’ কিংবা আকিরা কুরোসাওয়ার সামুরাই ড্রামা ‘কাগেমুশা’তেও বডি ডাবল থাকার ব্যাপারটি দেখা যায়।

অনেকেরই ধারণা, ক্যামেরার সামনে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের আচার-আচরণ একটু অন্যরকম। মাঝে মাঝে ক্যামেরায় তার চেহারা একটু অন্যরকম দেখায়, আবার অনেকসময় তাকে বড় বড় সানগ্লাসও পরতে দেখা যায়। এছাড়াও তার স্বামী, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথাবার্তায় মাঝেমধ্যে কিছু অসংলগ্নতা ধরা পড়ে। ট্রাম্প প্রায়ই “আমার স্ত্রী মেলানিয়া, যে আমার পাশেই আছে” এভাবে কথা শুরু করেন। হয়তো আসল মেলানিয়া পাশে নেই বলে ব্যাপারটি উল্লেখ করার প্রয়োজন অনুভব করেন তিনি।

মেলানিয়া ট্রাম্প ; Image Source: Skynews

কেন ধারণাটি সত্যি নয়:

এর আগে কখনো কোনো ফার্স্ট লেডিকে বডি ডাবল ব্যবহার করতে দেখা যায়নি, প্রয়োজনও নেই তার। তাছাড়া মেলানিয়ার চেহারা ক্যামেরার কারণে একটু আধটু অন্যরকম লাগতেই পারে, তার মানে এই নয় যে তিনি আসল মেলানিয়া নন। আবার মেলানিয়ার একজন দেহরক্ষীর সাথে তার চেহারার আশ্চর্যরকম মিল রয়েছে। এ কারণেও অনেকের ভুল হতে পারে।

টিনেজ সঙ্গীতশিল্পী লর্ড আসলে মধ্যবয়স্ক

গায়িকা ও গীতিকার লর্ড ২০১৩ সালে রয়্যালস নামের এক মাস্টারপিস গান উপহার দিয়ে রাতারাতি জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে যান। সেবছরেই হাঙ্গার গেমস ফ্র্যাঞ্চাইজের জন্য লিখে ফেলেন ‘এভরিবডি ওয়ান্টস টু রুল দ্য ওয়ার্ল্ড’ নামের আরেকটি অসাধারণ গান। টিনেজ বয়সে এরকম সব গান লেখার কারণে তাকে নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়। অনেকে ধারণা করে বসেন যে, লর্ড সবার কাছে বয়স লুকোচ্ছেন। আসলে তার বয়স নাকি চল্লিশের কাছাকাছি।

সঙ্গীতশিল্পী লর্ড ; Image Source: Angela Weiss/Getty Images

এর পেছনে তার নিজেরও হাত আছে বৈকি। ২০১৪ সালে ১৮ বছর বয়সী লর্ডে এক সাক্ষাৎকারে বলে বসেন, “দ্য ভার্জিন সুইসাইডস (১৯৯৯) মুভিটি টিনেজ বয়সে আমার ওপরে বেশ প্রভাব ফেলেছিল। অবশ্য আমি এখনও টিনেজ আছি!” আরেক সাক্ষাৎকারে মজা করে নিজের মানসিক বয়স ৪৫ বলে দাবি করেন তিনি।

ধারণাটি আসলে সত্যি নয়। নিউজিল্যান্ডের এই সঙ্গীতশিল্পীর জন্ম আসলে ১৯৯৬ সালে। এমা কারমাইকেল নামক এক সাংবাদিক নিজে তার বার্থ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেছেন। একজন কিশোরী হয়েও তিনি গভীর অর্থবহ সব গান লিখে চলেছেন একের পর এক।

স্টিভি ওয়ান্ডার আসলে চোখে দেখতে পান!

স্টিভি ওয়ান্ডারকে যারা চেনেন, তারা অন্তত তার ব্যাপারে দু’টি তথ্য জানেন। এক, তিনি একজন অসামান্য সঙ্গীতপ্রতিভা। দুই, তিনি দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (ভিন্নভাবে সক্ষম )। অন্ধ জ্যাজশিল্পী রে চার্লসের সাথে প্রায়ই তুলনা করা হয় তার। কিন্তু হঠাৎ করে ইন্টারনেটে গুজব ছড়িয়ে পড়ে তার দৃষ্টিশক্তি নিয়ে। ডেডস্পিন নামের এক পত্রিকা দাবি করে, বেশ কয়েকবার বাস্কেটবল খেলা দেখতে যেতে দেখা গেছে তাকে। একবার গান গাওয়ার সময়ে নিজের অবস্থানচ্যুত মাইক নিজেই ঠিক করেছেন তিনি। আর একবার সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, তার জীবনের স্বপ্ন হলো ফটোগ্রাফার হওয়া।

স্টিভি ওয়ান্ডার ; Image Source: Brad Barket/Getty Images

ধারণাটি পুরোপুরি মিথ্যা। স্টিভি ওয়ান্ডার জন্মগতভাবেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী (ভিন্নভাবে সক্ষম)। তার চোখের রেটিনাগুলো বিচ্ছিন্ন, ফলে তার চোখজোড়া পূর্ণাঙ্গভাবে গড়ে ওঠেনি। অন্ধ হবার পরেও বাস্কেটবল খেলা দেখতে যাবার ইচ্ছা তার হতেই পারে, খেলার ধারাভাষ্য তো শুনতে পান তিনি। ফটোগ্রাফার হবারও ইচ্ছা জাগতে পারে, তারমানে এই না যে তিনি আসলেই ফটোগ্রাফিতে দক্ষ। আর একজন গায়ক হিসেবে মাইকের অবস্থান ঠিক করা তো কোনো ব্যাপারই না।

পপতারকা অ্যাভরিল লাভিন বছর দশেক আগেই মারা গেছেন, তার জায়গা নিয়েছে একই চেহারার অন্য আরেকজন!

সঙ্গীতশিল্পী অ্যাভরিল লাভিনের জীবন এবং ক্যারিয়ার দু’টোই নাটকীয়তায় পরিপূর্ণ। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন পপতারকা হিসেবে। গানের মধ্যে পাংক রকের প্রভাব ছিল ভালোমতোই। স্কেটার বয় কিংবা কমপ্লিকেটেডের  মতো মজার মজার গানগুলো সহজেই মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।

কিন্তু ২০০৭ সালের দিকে তার স্টাইল আচমকাই পালটে যাওয়া শুরু করে। ‘গার্লফ্রেন্ড’ কিংবা ‘হ্যালো কিটি’র মতো গানগুলো হিট হলেও, বাজারের আর দশটা পপ গানের চেয়ে ভিন্ন কিছু বলে মনে হয়নি। হঠাৎ করেই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হারিয়ে কিছুটা পানসে হয়ে পড়েন অ্যাভরিল। ২০১৩ সালের দিকে রকতারকা চ্যাড ক্রোগারকে বিয়ে করার ব্যাপারটিও সমালোচনা বাড়িয়েছে বৈকি। কারণ, নিকলব্যাকের লিড সিঙ্গার ক্রোগারের বিরুদ্ধেও একঘেয়ে ধরনের গান লেখার অভিযোগ আছে।

পপতারকা অ্যাভরিল লাভিন ; Image Source: Scott Gries/Getty Images ; AvrilLavigneVEVO/Youtube

ইন্টারনেটের থিওরি অনুযায়ী, ২০০৩ সালের দিকে পাপারাজ্জিদের এড়ানোর জন্য নিজের ডোপেলগ্যাঙ্গার মেলিসা ভ্যান্ডেলাকে ভাড়া করেন অ্যাভরিল। ২০০৭ সালে অ্যাভরিলের মৃত্যুর পরে তার জায়গা নেন মেলিসা। পাংক-রক ধরনের গান বাদ দিয়ে সাদামাটা পপসঙ্গীত উপহার দেবার কারণ এটাই।

পুরো থিওরিটিই কাল্পনিক, বাস্তব কোনো ভিত্তিই নেই এর। সময়ের পরিক্রমায় লাভিনের চেহারা কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে, সেটি বয়স বাড়ার কারণে হতে পারে কিংবা সার্জারির কারণে। ব্রাজিলিয়ান এক ব্লগ অবশ্য এই থিওরিকে সত্য প্রমাণ করতে বদ্ধপরিকর ছিল।

Leave a Reply