Kudrate Jahan
Author, Bookworm, Cinephile, Cricfreak
Author, Bookworm, Cinephile, Cricfreak
Your mission, should you choose to accept it…
অত্যাধুনিক গ্যাজেটধারী স্পাইদের ভিড়ে টম ক্রুজ তার মিশন: ইম্পসিবল সিরিজ নিয়ে এসেছিলেন আজ থেকে প্রায় বাইশ বছর আগে। মুখের মুখোশ টেনে আসল চেহারা দেখিয়ে কাহিনীর মোড় পাল্টে দেওয়া, ইম্পসিবল মিশন ফোর্সের এজেন্ট কিংবা ডাবল এজেন্টদের দুর্ধর্ষ সব অভিযান কিংবা বিস্ফোরক থিম সং, সবকিছুই এখন আইকনিক। তাছাড়া এই সিরিজের অ্যাকশননির্ভর বুদ্ধিদীপ্ত স্ক্রিপ্ট আর ক্রুজের ডেয়ারডেভিল স্ট্যান্ট- সব মিলিয়ে বর্তমান সময়ের সেরা ব্লকবাস্টার ফ্র্যাঞ্চাইজে স্পাই সিনেমার ধারায় যুক্ত করেছে ভিন্ন এক মাত্রা।
গত ২৭ জুলাই বিশ্বব্যাপী মুক্তি পেল হলিউড মেগাস্টার টম ক্রুজের এই ব্লকবাস্টার অ্যাকশন সিরিজের ষষ্ঠ কিস্তি, মিশন: ইম্পসিবল- ফলআউট। টম ক্রুজ যে তার অ্যাকশন দৃশ্যগুলোয় কোনো রকম স্ট্যান্টম্যানের সাহায্য ছাড়াই অভিনয় করেন, এই জিনিস কারো অজানা থাকার কথা না। স্ট্যান্ট কো অর্ডিনেটর ওয়েড ইস্টউডের ভাষ্যে, ক্রুজের মাথায় কোনো স্ট্যান্ট করার ভূত চাপলে তিনি সোজাসুজি স্টুডিওকে বলে দেন, এই স্ট্যান্ট তাকে করতে না দেওয়া হলে তিনি এই মুভিতে কাজই করবেন না! নতুন এই সিনেমারই এক অ্যাকশন সিকোয়েন্সে এক ছাদ থেকে আরেক ছাদে লাফিয়ে পড়ার সময়ে টম ক্রুজের গোড়ালি ভেঙে যায়। যার কারণে শুটিং পিছিয়ে গিয়েছিল প্রায় কয়েক মাস। তবে অবাক করা বিষয় হলো, গ্রাহাম নর্টন শোতে এই দুর্ঘটনার এক্সটেন্ডেড ক্লিপে দেখা যায়, গোড়ালি ভাঙার পরেও ক্রুজ খোঁড়াতে খোঁড়াতে ছাদ পার হয়ে সেই শট শেষ করেছিলেন!
যা-ই হোক, আমাদের আজকের এই লেখাটি শুধু ভয়ঙ্কর স্ট্যান্ট নিয়েই নয়, এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করব এই সিরিজের অন্যান্য মুভিগুলোর পেছনের মজার কিছু ট্রিভিয়া। যেমন ধরুন, এই মুভির একটি চরিত্রের প্রয়োজনেই গোঁফ রেখেছিলেন হেনরি ক্যাভিল, তাই জাস্টিস লিগ রিশ্যুটের সময়ে ডিসি তাদের ‘সুপারম্যান’ এর মুখে সিজিআই ইফেক্ট ব্যবহার করতে বাধ্য হয়।
মিশন: ইম্পসিবল মুভিটি মূলত সিবিএস চ্যানেলে ১৯৬৬-১৯৭৩ সালে প্রচারিত একই নামের টিভি সিরিজের অভিযোজন। টম ক্রুজ ছোটবেলায় সিরিজটির পাঁড় ভক্ত ছিলেন, সিরিজ থেকে মুভি বানানোর ব্যাপারটি তার মাথাতেই প্রথমে আসে।
প্রথম থেকেই ব্যাপক সাফল্যের দেখা পাওয়া মুভিগুলোকে অবশ্য অরিজিনাল টিভি অভিনেতারা খুব একটা পছন্দ করেননি। টিভি অভিনেতাদের একজন গ্রেগ মরিসকে প্রথম মিশন: ইম্পসিবল মুভিতে অল্পক্ষণের জন্য বার্নি কোলিয়ারের চরিত্রে দেখা যায়। পরে মরিস নিজেই জানিয়েছেন যে, তিনি মিশন: ইম্পসিবল সিরিজের কোনো মুভিই দেখেননি। আবার টিভি সিরিজটির পরিচালক রেজা বাদিয়ি কিছুদিন প্রথম মুভির সাথে যুক্ত ছিলেন। পরে মিশন: ইম্পসিবল ১ পরিচালক ব্রায়ান ডি পালমা তাকে সসম্মানে বিদায় নিতে বলেন, কারণ মুভিটির কাহিনী বেশ ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছিল।
তবে টিভি সিরিজটির প্রতি একেবারে কোনো হোমেজ ছিল না, তা বলা যাবে না। মিশন: ইম্পসিবল- ঘোস্ট প্রটোকলের শেষে ইথান হান্টের কাছে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মিশনের নির্দেশ আসে। টিভি সিরিজে সিন্ডিকেট ছিল আইএমএফ এজেন্টদের মহাশত্রু মাফিয়া সম্রাট গোষ্ঠী।
মিশন: ইম্পসিবল রিলিজ পাওয়ার বছরেই দ্য ইংলিশ পেশেন্ট মুভির জন্য অস্কার পাওয়া জুলিয়েট বিনোশকে এই মুভিতে নেবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু হলিউড ব্লকবাস্টার ধাঁচের মুভিতে কাজ করার ইচ্ছা না থাকায় বিনোশ তাতে না করে দেন। পরে ফরাসি অভিনেত্রী ইমানুয়েল বিয়ার্ট ক্লেয়ার ফেলপসের চরিত্রটি করেন।
মিশন: ইম্পসিবল ৩ মুভিতে স্কারলেট জোহানসন, ক্যারি অ্যান মস এবং রিকি জারভাইসের কাজ করার কথা ছিল। আবার পরিচালনা করার কথা ছিল সেভেন, ফাইট ক্লাব খ্যাত পরিচালক ডেভিড ফিঞ্চারের। পরে বিভিন্ন কারণে কারোরই কাজ করা হয়নি। রিকি জারভাইসের জায়গায় আসেন সায়মন পেগ, মিশন: ইম্পসিবল ৩ থেকে শুরু করে পরের সবকটি মুভিতে কাজ করেছেন তিনি।
এডগার রাইটের শন অফ দ্য ডেড(২০০৪) বেশ সফল হবার পরে মুভির তারকা সায়মন পেগের কাছে তার পরবর্তী হলিউড প্রজেক্ট সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, এমন না যে আমি মিশন: ইম্পসিবল ৩ মুভিতে অভিনয়ের সুযোগ পাব। কিন্তু পরের বছরেই তার কথাটি সত্য হয়।
এদিকে, ইথান হান্টের বাগদত্তা জুলিয়া মিডের চরিত্রে র্যাচেল ম্যাকঅ্যাডামসকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। পরে সেই চরিত্রটি করেন মিশেল মোনাঘান। জুলিয়ার চরিত্রে অডিশন দিতে আসার সময়েই টম ক্রুজের সাথে কেটি হোমসের পরিচয় হয়।
স্যার ইয়ান ম্যাকেলেনকে মিশন ইম্পসিবল: ২ এর সোয়্যানসেক চরিত্রটি করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু নিজের চরিত্রের সংক্ষিপ্ত স্ক্রিপ্ট দেখে তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। পরে চরিত্রটি করেন স্যার অ্যান্থনি হপকিন্স। মজার ব্যাপার, এর পরের দিনেই ম্যাকেলেন একই সাথে লর্ড অফ দ্য রিংস এর গ্যানডালফ এবং এক্স-ম্যান ফ্র্যাঞ্চাইজের ম্যাগনেটো চরিত্রে অভিনয় করার প্রস্তাব পান।
মিশন: ইম্পসিবল ২ এ ইথান হান্টের লাভ ইন্টারেস্ট হিসেবে থ্যান্ডি নিউটনকে নেবার পরামর্শ দেন ক্রুজের তৎকালীন স্ত্রী নিকোল কিডম্যান। তারা দুইজন একই সাথে ফ্লার্টিং মুভিতে কাজ করেছিলেন। মুভির স্ক্রিপ্ট লেখার আগেই তাকে চরিত্রটি দিয়ে দেওয়া হয়।
মিশন: ইম্পসিবল সিরিজে উইলিয়ামের ব্র্যান্ডটের ভূমিকায় অভিনয়ের জন্য টম হার্ডি, ক্রিস পাইন, কেভিন জেগারস, অ্যান্থনি ম্যাকিকে ভাবা হয়েছিল। অবশেষে এই ভূমিকায় জেরেমি রেনারকে নেওয়া হয়।
এদিকে রেনারকে আবার মিশন: ইম্পসিবল ৪ এর পরে টম ক্রুজের রিপ্লেসমেন্ট বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু ঘোস্ট প্রটোকলের বিশাল সাফল্যের পরে টম ক্রুজকে মিশন: ইম্পসিবল থেকে অবসর দেবার পরিকল্পনা বাতিল হয়ে যায়। তাই জেরেমি রেনারকে পার্শ্ব ভূমিকায় অভিনয় করেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। রেনারের সাথে একই ঘটনা ঘটেছিল বোর্ন ট্রিলজির পরে। ম্যাট ডেমন এর জায়গায় দ্য বোর্ন লিগ্যাসিতে এসেছিলেন তিনি, কিন্তু সিরিজের পঞ্চম মুভি জেসন বোর্নে আবার ম্যাট ডেমনকে ফিরিয়ে আনা হয়। আর সত্যিই তো, টম ক্রুজ ছাড়া মিশন ইম্পসিবল আর ম্যাট ডেমনকে ছাড়া বোর্ন সিরিজের মুভির কথা ভাবা আসলেই অসম্ভব!
ঘোস্ট প্রটোকলের পরে সিরিজ থেকে টম ক্রুজের সরে দাঁড়ানোর কথা থাকায় দ্য ম্যান ফ্রম আংকেল মুভিতে নেপোলিয়ন সলোর ভূমিকায় তাকে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু রোগ নেশনের কারণে রোলটি চলে যায় তার ফলআউট সহ-অভিনেতা হেনরি ক্যাভিলের কাছে।
এমনকি হিউ জ্যাকম্যানের উলভারিন হবার পেছনেও মিশন: ইম্পসিবল সিরিজের প্রচ্ছন্ন ভূমিকা আছে! প্রথম এক্স ম্যান মুভিতে উলভারিন চরিত্রে চূড়ান্ত ছিলেন ডুগ্রে স্কট। কিন্তু মিশন: ইম্পসিবল ২ এ ভিলেনের ভূমিকায় অভিনয় করার সময়ে তার হাত ভেঙে যায়, ফলে শিডিউলে জটিলতার সৃষ্টি হয়। ফলে ডুগ্রে স্কটের জায়গা নেন জনপ্রিয় এই অস্ট্রেলিয়ান অভিনেতা।
টম ক্রুজ ছাড়া কেবলমাত্র ভিং রেমসকেই সিরিজের ৬টি মুভিতেই দেখা গেছে হ্যাকার লুথার হিসাবে। সাধারণত অ্যাকশন মুভিগুলোতে হ্যাকার হিসেবে নেওয়া হয় চটপটে চশমাওয়ালা তরুণ চেহারার অভিনেতাদেরকে। সেই স্টেরিওটাইপের বাইরে যাবার জন্যই ভিং রেমসকে কাস্ট করা হয়েছিল। এছাড়াও সাইমন পেগ আর মিশেল মোনাঘানকে ৪টিতে আর জেরেমি রেনারকে সিরিজের ৩টি মুভিতে দেখা গেছে।
বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড মেটালিকাকে কখনো কোনো মুভির জন্য গান লিখতে রাজি করানো যায়নি। তবে মিশন: ইম্পসিবল ২ এর জন্য তারা “আই ডিজ্যাপেয়ার” গানটি লিখে।
সিরিজের মুভিগুলোর চিত্রনাট্য লেখা নিয়েও মজার কিছু ঘটনা আছে। প্রথম মিশন: ইম্পসিবল মুভিটি শ্যুটিং করা শুরু হয়েছিল কোনো পূর্ণাঙ্গ স্ক্রিপ্ট ছাড়াই। পরিচালক ব্রায়ান ডি পালমা প্রথমে সাজিয়েছিলেন সবগুলো অ্যাকশন সিকোয়েন্সকে, তারপর বিচ্ছিন্ন ঘটনাগুলোকে জোড়া দিয়ে লিনিয়ার এবং নন-লিনিয়ারভাবে এই নিও নোয়ার মুভির কাহিনী সাজানো হয়।
দ্বিতীয় মুভিটির বেলায়ও ঘটে প্রায় একই ঘটনা। ৯০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের মিশন: ইম্পসিবল ২ মুভির কাজ শুরুর পরেও এর চিত্রনাট্যকার চায়নাটাউনখ্যাত অস্কারজয়ী রবার্ট টাউন স্ক্রিপ্টে নানা পরিবর্তন এনেছেন। এই মুভিটির কাহিনী প্রথমটির মতো জটিল না, তবে লম্বা লম্বা অ্যাকশন সিকোয়েন্স, গাড়ির বিস্ফোরণ, দুমুখো এজেন্ট কিংবা লাভ ট্রায়াঙ্গল মিলিয়ে কোনো দিক দিয়েই কমতি ছিল না। অবশ্য খেয়াল করলে কিছু প্লটহোল ধরা পড়ে। তবে তার পেছনে মূল কারণ হলো মুভিটিকে কাটছাঁট করে ছোট করে ফেলা। জন ইয়ুর এডিটে মিশন: ইম্পসিবল ২ ছিল সাড়ে তিন ঘণ্টা লম্বা, পরে একে দু’ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়।
আবার মিশন: ইম্পসিবল ৩ এ বিলি ক্রুডুপের করা জন মাসগ্রেভ চরিত্রটি ভিলেন হবার কথা লেখা হয় শ্যুটিং এর দিন সকালে। বিলি ক্রুডুপ স্ক্রিপ্ট মুখস্থ করেছিলেন, তবে তার পরেও টম ক্রুজ সেই দৃশ্যটি করার সময়ে হাতে কিউ কার্ড ধরেছিলেন।
অ্যাকশন প্যাকড সিরিজে গোলাগুলি থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সিরিজের প্রথম মুভিতে টম ক্রুজকে একটি বারও পিস্তল ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। টানটান উত্তেজনার এই এসপিওনাজ থ্রিলারে কোনো গানফাইটের দৃশ্য নেই।
প্রথম মুভিতে ইথান হান্টের সাথে কম্পিউটারে ম্যাক্সের মেসেজ চালাচালির দৃশ্যগুলো বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এছাড়াও অন্য দৃশ্যগুলোতে তাদের কম্পিউটারগুলো দেখানোর জন্য অ্যাপল কোম্পানি ১৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করে মিশন: ইম্পসিবলের প্রযোজনা সংস্থা প্যারামাউন্টের সাথে। এছাড়া তারা মিশন: ইম্পসিবলের একটি অনলাইন গেমও চালু করে।
জেনিফার গার্নার অভিনীত জে জে আব্রামসের অ্যালিয়াস টিভি সিরিজটি টম ক্রুজের দারুণ পছন্দ হয়েছিল। ২০০৪ সালে ডিভিডিতে সবগুলো সিজন বিঞ্জওয়াচ করার পরে টম ক্রুজ তার তৃতীয় মিশন: ইম্পসিবল মুভির পরিচালক হিসাবে আব্রামসকে পছন্দ করেন। আগে কোনো মুভি পরিচালনা না করা আব্রামস ১৫০ মিলিয়ন ডলার বাজেটের একটি মুভির কাজ হাতে পেয়ে নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়েন। এখন অবশ্য আব্রামস স্টার ওয়ার্স, স্টার ট্রেক সহ বড় বড় ফ্র্যাঞ্চাইজের বিভিন্ন প্রজেক্টের সাথে যুক্ত।
ঘোস্ট প্রটোকলের ব্যাপক সাফল্যের পরে এর পরিচালক ব্র্যাড বার্ডকে রোগ ন্যাশনেও পরিচালক হবার প্রস্তাব দেন টম ক্রুজ। কিন্তু টুমোরোল্যান্ড এর জন্য বার্ড সুযোগটি হাতছাড়া করেন। পরে টম ক্রুজের পরামর্শে ক্রিস্টোফার ম্যাককোয়ারিকে নেয়া হয়। তিনি এর আগে ক্রুজের জ্যাক রিচার মুভিটির লেখক এবং পরিচালক ছিলেন। তাছাড়া টম ক্রুজের ভ্যাল্কাইরি এবং এজ অফ টুমরো মুভির লেখকও ছিলেন তিনি।
পিক্সারের সব মুভিতে A113 শব্দটি ইস্টার এগ হিসেবে দেখা যায়। র্যাটাটুইল এবং দ্য ইনক্রেডিবলসের পরিচালক ব্র্যাড বার্ডের কারণেই ঘোস্ট প্রটোকল মুভিতে এই শব্দটি ইথান হান্টের কোড নম্বর হিসেবে দেখা যায়।
মিশন: ইম্পসিবল ৩ মুভিতে ইথান হান্টের কাছে ডিজপোজেবল ক্যামেরা দিয়ে মেসেজ পাঠানোর বুদ্ধিটা জে জে আব্রামসকে পেয়েছিলেন কিংবদন্তী পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গের কাছ থেকে।
মিশন: ইম্পসিবল মুভির শেষের দিকে ইলেকট্রিক ট্রেনের ওপরে আইকনিক দৃশ্যটির কথা কার না মনে আছে! এই দৃশ্যে টম ক্রুজ এবং জন ভইটের মুখের সামনে ঘণ্টায় ১৪০ মাইল বেগে বাতাস বের করা একটি উইন্ডো মেশিন ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই না, ফ্রান্সের হাইস্পিড টিজিভি ট্রেন সার্ভিসের ওপরে শ্যুট করার জন্য টম ক্রুজ কর্তৃপক্ষের সাথে ডিনারে বসে তাদেরকে রাজি করান।
একইভাবে সিরিজের ৫ নম্বর মুভি রোগ নেশনের জন্য ফ্রান্সের এয়ারবাস গ্রুপ প্লেন টম ক্রুজের জন্য নিরাপদ নয় বলে তাদের প্লেনটি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। এবারেও ক্রুজ তাদেরকে রাজি করান। একটা ডামি দিয়ে পরীক্ষা করার পরে আটটি টেকে প্লেনের শটটি ওকে হয়। প্রায় ৫০০০ ফুট উপরে ঘণ্টায় ১৮৪ মাইল গতিবেগে থাকা প্লেনটির দরজা এমনভাবে বানানো হয়েছিল, যাতে কোনো সমস্যা হলে ক্রুজ ভেতরে চলে যেতে পারেন। তারপরেও ঝামেলার শেষ হয়নি। দৃশ্যটিতে চোখ খোলা রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল বলে তার চোখের জন্য বিশেষ প্রটেকটিভ লেন্স বানানো হয়।
ঘোস্ট প্রটোকল মুভিতে বিশ্বের উচ্চতম ভবন বুর্জ খলিফায় টম ক্রুজের পাগলাটে স্ট্যান্টের কথা সম্ভবত সবারই জানা। এই দৃশ্যের শুরুতে ক্রুজ জানালা খুলে ঝাঁপ দিয়ে বুর্জ খলিফার একটি স্কাইস্ক্র্যাপার বরাবর যাওয়া শুরু করেন। গায়ের সাথে হারনেস আটকানো থাকলেও কোনো স্ট্যান্টম্যান ছাড়াই প্রায় ২৭২২ ফুট উচ্চতায় গগনচুম্বী ভবনে ঝুলে থেকে দৃশ্যটির শ্যুটিং করা একমাত্র তার পক্ষেই সম্ভব। ক্রুজ বলেছিলেন, দেখে মনে হতে পারে আমি উড়ছি, কিন্তু আমি আসলে বাতাসকে নিয়ন্ত্রণে এনে রাডারের মতো বিল্ডিংটার গায়ে হাঁটার চেষ্টা করছিলাম। বুর্জ খলিফার দুর্দান্ত দৃশ্যটি শ্যুটিং করতে দেওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ঘোস্ট প্রটোকল প্রথম মুক্তি পায় দুবাইয়ে।
বাস্তব দেখানোর জন্য মিশন: ইম্পসিবল ২ এ ভিলেনের সাথে মারামারির সময়ে টম ক্রুজ সত্যিকারের ছুরি ব্যবহার করতে বলেন। শুধু তা-ই না, ভিলেনের ভূমিকায় থাকা ডুগ্রে স্কটকে বলেন, পরিচালক জন ইয়ু এমনভাবে হিসাব করে ছুরির সাথে তার সেট করে রেখেছিলেন, যাতে সেটা ক্রুজের চোখ থেকে এক ইঞ্চিরও কম দূরত্বে এসে থেমে যায়।
মিশন: ইম্পসিবল ২ শুরু হয় ইথান হান্টের ভয়ংকর এক পাহাড়ে চড়ার দমবন্ধ করা দৃশ্য দিয়ে। জন ইয়ুর পরিচালক জীবনের সবচেয়ে কঠিন অভিজ্ঞতা ছিল সেটা। টম ক্রুজের আপত্তির কারণে কোনো নকল পাহাড় কিংবা সেফটি নেট ব্যবহার করা হয়নি। ইয়ু পরে বলেছেন, আমি ওকে অনেকবার না করেও ঠেকাতে পারিনি। শ্যুটিং এর সময়ে এতই ভয় পেয়েছিলাম যে বারবার চোখ বন্ধ করে ফেলছিলাম। এমনকি এক পর্যায়ে ক্রুজ ১৫ মিনিট উঁচু একটা লাফ দিতে গিয়ে কাঁধে আঘাত পান। কাহিনীর সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকার পরেও এটি ক্রুজের সবচেয়ে স্মরণীয় স্ট্যান্টের একটি।
রোগ ন্যাশনে ১২০ ফিট লেজ থেকে ঝাঁপ দিয়ে পানির নিচে এক সিকিউরিটি ভল্ট খুলতে যান ইথান হান্ট। অ্যাকশন দৃশ্যটির জন্য ক্রুজ ছয় মিনিট দম ধরে রাখার প্রশিক্ষণ নেন। এই প্রশিক্ষণ নেবার সময়ে তিনি একাধিকবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলেন। এমনকি দৃশ্যটি যখন শ্যুট করা হয়, তখনও ডুবে যাচ্ছেন ভেবে স্ট্যান্ট কোঅরডিনেটর বেশ কয়েকবার তাকে টেনে তুলে ফেলেছিল। পরে ক্রুজ তাকে বলেন, করছ কী তুমি? আমি তো অভিনয় করছি! স্ট্যান্ট কোঅরডিনেটর বলেন,আমি বুঝেছি, কিন্তু ব্যাপারটা বড় বেশি বাস্তব লাগছে। এর সাথে তুলনায় মরক্কোর রাস্তায় দুর্ধর্ষ বাইক চেজের দৃশ্যটাকেও কম বলে মনে হতে পারে।
আগের স্ট্যান্টগুলোকে ছাড়িয়ে যাবার জন্যই সিরিজের ষষ্ঠ ছবিতে উচ্চ অ্যাটিচুডের স্কাইডাইভ তথা হ্যালো জাম্প দেখানো হয়। অভিনেতা হিসেবে ক্রুজই প্রথম হ্যালো জাম্প দেন। এর জন্য সাধারণত মিলিটারি সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। কিন্তু তাতে মুখ ঢেকে যাবে বলে শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য আলাদা কিছু সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়। ২৫,০০০ ফুট উচ্চতা থেকে ঝাঁপ দেবার পরে মাটি থেকে ২,০০০ ফিট উপরে প্যারাসুট খোলে। পুরো সময়টাতেই ক্রুজ ক্যামেরার সামনে এক্সপ্রেশন দেখিয়ে গেছেন।
মিশন: ইম্পসিবল মুভির ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যে হাই সিকিউরিটি সিআইএ অফিসের ভল্ট থেকে একটি ডিস্ক উদ্ধার করার দায়িত্ব পড়ে ইথান হান্টের কাঁধে। সেই দৃশ্যে ছাদ থেকে নিচে নামার সময়ে যখন হাত পিছলে যায়, তখন ক্রুজের মাথা বারবার মেঝে ছুঁয়ে যাচ্ছিল। কয়েকবার এমন হবার পরে টম ক্রুজ বুদ্ধি করে একজন স্ট্যান্টম্যানের কাছ থেকে ভাংতি পয়সা নিয়ে নিজের জুতায় ভরে নেন, ফলে ভারসাম্য রক্ষা হয়।
মিশন: ইম্পসিবলে রেস্টুরেন্টে বিস্ফোরণের দৃশ্যটি ভিন্ন দুই দেশে শ্যুট করা হয়। অ্যাকুরিয়াম ফাটার দৃশ্যটি ছিল প্যারামাউন্ট স্টুডিওর ভেতরে, আর টম ক্রুজের রাস্তায় চলে আসার পরের দৃশ্যটি ছিল সত্যিকারের প্রাগের রাস্তার। কয়েকশ গ্যালন পানি বিস্ফোরণের দৃশ্যটি ছিল আসল, এতে কোনো ভিজুয়াল ইফেক্ট ব্যবহার করা হয়নি। কোল্ড ওয়ারের ইউরোপের আবহ ছড়ানোর জন্য প্রাগে বিভিন্ন দৃশ্য শ্যুটিংয়ের সময়ে ১১টি জেনারেটর ব্যবহার করে বাড়িগুলোতে আলো জ্বালানো হয়েছিল। দৃশ্যটি এতই সুন্দর ছিল যে দূরদূরান্ত থেকে ফটোগ্রাফারেরা চলে আসেন সেই ছবি তুলতে, কেননা নৈশকালীন প্রাগের এই রূপ আগে কখনো দেখা যায়নি।
মিশন: ইম্পসিবল ৩ এ ব্রিজের ওপরে মিসাইল বিস্ফোরণের দৃশ্যটিতে মিসাইলটি সিজিআই হলেও ক্রুজের গাড়ির ওপরে আছড়ে পড়ার ব্যাপারটা আসলই ছিল। মনে রাখতে হবে, শটটা কিন্তু একবার না, মাল্টিপল টেকে ওকে হয়েছে। এই মুভিতে রোমের জনবহুল এলাকায় শ্যুটিং বেশ কষ্টসাধ্য ছিল। তাই কয়েকজন মডেলকে বিকিনি পরিয়ে আর কয়েকজনকে নান সাজিয়ে কিছুটা দূরে একটা নকল শ্যুটিং স্পট বানানো হয়। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে মানুষজন ভিড় করে শ্যুটিং দেখতে থাকে, এদিকে আসল শ্যুটিং তাদের অগোচরে প্রায় নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়।
হলিউড অভিনেতা ডারমট মুলরনি সিরিজের কোনো মুভিতে অভিনয় না করেও এর সাথে সম্পৃক্ত আছেন। পেশাদার সেলো আর্টিস্ট মুলরনির বাজানো একটি সুর মিশন: ইম্পসিবল মুভিতে শোনা যায়।