Kudrate Jahan
Author, Bookworm, Cinephile, Cricfreak
Author, Bookworm, Cinephile, Cricfreak
তুমুল লড়াইয়ের একপর্যায়ে টনি স্টার্কের বুকে ছুরি ঢুকিয়ে দিলো থানোস। মৃত্যুপথযাত্রী টনিকে দেখে আঁতকে উঠলেন ডক্টর স্ট্রেঞ্জ, অন্য এক ডাইমেনশন থেকে নিয়ে এসে থানোসের হাতে তুলে দিলেন তার পরম আরাধ্য টাইম স্টোনটি। কিন্তু কেন? কারণ ১৪ মিলিয়ন ৬০৫টি সম্ভাবনার মধ্যে কেবলমাত্র এই একভাবেই থানোসকে হারানো সম্ভব, আর সেজন্য এই কাজটি করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। অবশেষে ম্যাড টাইটান থানোস ছয়টি ইনফিনিটি স্টোনের সাহায্যে তার ইচ্ছাপূরণ করল। নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলেন আমাদের প্রিয় কয়েকজন সুপারহিরো, সেই সাথে পুরো বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের অর্ধেক জনপ্রাণী।
এরকমই ভয়ানক এক ক্লিফহ্যাঙ্গার দিয়ে শেষ হয়েছিল ২০১৮ সালের ‘অ্যাভেঞ্জারস: ইনফিনিটি ওয়ার’। ভক্তদের একবছরের রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার প্রহরশেষে গত ২৬ এপ্রিল বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেল অ্যাভেঞ্জারস সিরিজের চতুর্থ পর্ব, ‘অ্যাভেঞ্জারস এন্ডগেম‘। ২০০৮ সালের ‘আয়রন ম্যান’ দিয়ে যাত্রা শুরু করা অ্যাভেঞ্জার যুগের শেষ হলো অবশেষে। মার্ভেলের ভবিষ্যতের প্রজেক্টগুলোতে যুক্ত থাকবেন কেউ কেউ। কিন্তু আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, থর, হাল্ক, ব্ল্যাক উইডো, হক আই- এই ছয় অরিজিনাল অ্যাভেঞ্জারকে রিবুট ছাড়া আর কখনো একসাথে দেখা যাবে না। বিশ্বজুড়ে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মাঝে উন্মাদনা সৃষ্টি করা এই মুভিটিকে নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন। বেশ কিছু প্লট উঠে এসেছে এখানে। সুতরাং স্পয়লার অ্যালার্ট!
উদ্দেশ্যহীন বিষাদময় এক পৃথিবীর প্রেক্ষাপটে মুভির কাহিনী শুরু হয়। মহাবিশ্বে ‘ভারসাম্য’ আনার পরে অবসরে চলে গেছে থানোস। পৃথিবীর তিন ট্রিলিয়ন মানুষসহ বাকি সবাইকে ফিরিয়ে নিয়ে আসার মিশন শুরু করেন অ্যাভেঞ্জারেরা। তাদের সাথে যোগ দেন রোডস, রকেট, নেবুলা। কিন্তু বেশ কিছুদিন কেটে যাওয়ায় তাদের মনের ক্ষীণ আশাটাও দূরাশায় পরিণত হতে থাকে। তারপরেও হাল ছেড়ে দিতে একেবারেই নারাজ স্টিভ রজার্স। সেই সময়েই অতর্কিতে আগমন ঘটে স্কট ল্যাং ওরফে অ্যান্ট-ম্যানের।
কিছুটা দ্বিধা থাকলেও অন্য সবার সাথে মিশনে ঠিকই যোগ দেন টনি স্টার্ক। আগের সব দ্বন্দ্ব ভুলে স্টিভ রজার্সের সাথে যোগ দিয়ে শুরু করেন মাস্টারপ্ল্যান। ফুটফুটে মরগান স্টার্ককে ঘিরে গড়ে তোলা নিজের নিখুঁত জীবনকে ত্যাগ করেন বৃহত্তর স্বার্থে। কয়েক বছর আগে টনিকে স্বার্থপর বলে দাবি করেছেন স্টিভ। এদিকে স্টিভকেও কেবল সিরামসর্বস্ব সুপার সোলজার বলে দাবি করেছিলেন টনি। দুজনেই দুজনের কথা ভুল প্রমাণ করে ছাড়লেন এবার।
বজ্রদেবতা থরের বেহাল অবস্থা দেখে দর্শকের চোখ কপালে উঠতে পারে। প্রবল নেতিবাচক অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেয়াটাই তার কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। র্যাগনারক এবং ইনফিনিটি ওয়ারের ঘটনাপ্রবাহে নিজের প্রায় সবকিছুই হারিয়েছেন তিনি। থানোস বধের সুযোগ হারানোটাও তাকে অনুশোচনায় পোড়াচ্ছে।
বাইফ্রস্ট দিয়ে স্টর্মব্রেকার হাতে ওয়াকান্ডার মাটিতে নেমে আসা সেই দুর্ধর্ষ বজ্রদেবতার তেজ বেশ ক্ষীণ ছিল তাই।এবারে অবশ্য মাথার দিকে তাক করতে ভুল করেননি তিনি। থরের পোস্ট ট্রমা কিছুটা হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করা হলেও তার মানসিক যন্ত্রণার ব্যাপারটি কিন্তু যথেষ্ট গুরুতর ছিল। সেজন্যই ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্টের স্বার্থে থরকে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করাটা প্রয়োজন ছিল।
বেশ কয়েকবছর ধরেই নিজের হাল্ক সত্ত্বার সাথে টানাপোড়েন চলছিল ব্রুস ব্যানারের। সাত পিএচডিধারী ব্রুস অবশেষে সেই সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের পরিচিত সেই ‘স্ম্যাশ’ করা হাল্কের সাথে অবশ্য এই হাল্কের বেজায় ফারাক। তারপরেও স্ট্রংগেস্ট অ্যাভেঞ্জার কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি ঠিকই পালন করেছেন। তবে দুর্ভাগ্য মার্ক রাফালোর, ইউনিভার্সালের সাথে চুক্তির জটিলতায় তার হয়তো আর সলো মুভি করা হবে না।
ক্লিন্ট আর নাতাশার সম্পর্ক পূর্ণতা পেয়েছে এখানে। বুদাপেস্টে কী ঘটেছিল তা হয়তো আমরা শীঘ্রই জানতে পারব। তবে ব্রুস আর নাতাশার গল্পটা অবশ্য অসমাপ্তই থেকে গেছে। অ্যাভেঞ্জারদের দলে রিক্রুট করার জন্য ব্রুসকে খুঁজে বের করেছিলেন নাতাশা, হাল্ক সত্ত্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করেছেন বারবার। তার কণ্ঠেই দীর্ঘ আড়াই বছর পরে মানুষরূপে নিজেকে ফিরে পান ব্রুস। কিন্তু এজ অফ আলট্রনে পাহাড়ের ধার থেকে ফেলে দেবার পরে অনস্ক্রিনে তাদের মধ্যে আর কোনো দৃশ্য ছিল না। এন্ডগেমেও কমেডিক মুহূর্তের স্বার্থে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
সাইফাই ফ্যান্টাসি জনরার মুভি বলে অভিনেতাদের অভিনয় বাদ দিয়ে কাহিনীর টুইস্ট আর অ্যাকশন নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে বেশি। বক্স অফিস কাঁপানো এই মুভির অংশ হয়ে পকেট গরম করলেও তাই তাদেরকে কিছুটা দুর্ভাগাই বলতে হবে। বিশেষ করে রবার্ট ডাউনি জুনিয়র, ক্রিস এভান্স, ক্রিস হেমসওয়ার্থ এই তিনজন একেবারে টপ নচ পারফরম্যান্স দিয়েছেন যেহেতু। এর আগে দুবার অস্কার মনোনয়ন পাওয়া ডাউনি জুনিয়রকে আরেকটি মনোনয়ন দেবার জন্য লবিং চলছে বলেও শোনা যাচ্ছে।
যেরকম বিশাল বাজেটের ফ্র্যাঞ্চাইজ মুভি, সে অনুযায়ী এন্ডগেমে অ্যাকশনের পরিমাণ যথেষ্ট কম ছিল। মুভিগুলোর ট্রেলারে কোনো অ্যাকশন প্যাকড দৃশ্য না রেখে নির্মাতারা সেই আভাসই দিয়েছিলেন হয়তো। শেষের দিকের এপিক ব্যাটলটিও খুব বেশি সময় নেয়নি। আয়রন ম্যানের মার্ক ৮৫ স্যুটকে মার্ক ৫০ এর চেয়ে কিছুটা কম কার্যকরী লেগেছে। ইনফিনিটি ওয়ারে গন্টলেট থাকার কারণে থানোস একটু দুর্বল ছিল, কিন্তু এখানে সে তার পূর্ণশক্তি নিয়েই লড়াইয়ে নেমেছে। লড়াই ক্ষণস্থায়ী হবার সেটাও একটি কারণ। যথেষ্ট ডার্ক টোনের মুভি হলেও হাস্যরসাত্মক মুহূর্তের অভাব ছিল না। আর ভক্তমাত্রই জানবেন, ‘আই অ্যাম আয়রন ম্যান’, ‘হেইল হাইড্রা’, ‘লাভ ইউ থ্রি থাউজ্যান্ড’ কিংবা ‘অ্যাভেঞ্জারস অ্যাসেম্বল’ উক্তিগুলোর মাহাত্ম্য কতখানি।
টাইম ট্র্যাভেলকে কেন্দ্র করে চলা প্লট দ্বন্দ্বে ফেলেছে অনেককেই। এক্ষেত্রে গ্র্যান্ডফাদার প্যারাডক্স কিংবা বাটারফ্লাই ইফেক্টের নীতি অনুসরণ করে চলেনি মার্ভেলের টাইমলাইন থিওরি। মাল্টিভার্স নিয়ে আসার লক্ষ্যেই এখানে উদ্ভব ঘটেছে বিভিন্ন টাইমলাইনের। ইনফিনিটি স্টোন নিয়ে আসার সময়ে যেমনভাবে টাইমলাইনগুলোর সৃষ্টি হয়েছে, তেমনিভাবে স্টোনগুলো ফিরিয়ে দিয়ে সেগুলোকে মূল টাইমলাইনের সাথে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে। তারপরেও অনেক বিষয় খাপছাড়া রয়ে গেছে এখনো। আসন্ন গার্ডিয়ান অফ দ্য গ্যালাক্সি: পার্ট থ্রি, ডক্ট্রর স্ট্রেঞ্জের সিক্যুয়েল কিংবা ডিজনি স্ট্রিমিংয়ের টিভি সিরিজগুলোয় হয়তো সেসবের জবাব মিলবে। এদিকে স্টিভ রজার্সের বয়স বেড়ে যাবার বিষয়টি নিয়ে লেখকেরা বলেছেন, তিনি অন্য কোনো টাইমলাইনে নয়, বরং এই প্রাইম টাইমলাইনেই পেগি কার্টারের সাথে পুরো জীবন কাটিয়ে এসেছেন। এ কারণেই এজেন্ট কার্টারের স্বামীকে আগে কখনো দেখানো হয়নি।
মুভির সেরা একটি দৃশ্য ছিল থানোসের বিরুদ্ধে অ্যাভেঞ্জারের মূল ট্রিনিটির লড়াই। সেসময়ে থানোসের বিরুদ্ধের ম্যিয়লনির নিয়ে ক্যাপ্টেন আমেরিকার লড়াই নিঃসন্দেহে গোটা মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের সেরা মুহূর্তগুলোর একটি। স্টিভ রজার্সের ম্যিয়লনির তোলার যোগ্যতা প্রসঙ্গে অবশ্য অনেকেই দ্বন্দ্বে পড়েছেন। এর আগে অ্যাভেঞ্জারস: এজ অফ আলট্রন মুভিতে পার্টি গেম খেলার সময়ে স্টিভ রজার্সকে ম্যিয়লনির তোলার জন্য চ্যালেঞ্জ করেছিলেন থর। হ্যামারটিকে কিছুটা নড়াতে পারলেও শেষ পর্যন্ত তোলেননি স্টিভ, তবে থরের মুখে শঙ্কা ফুটে উঠেছিল ঠিকই।
‘ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়ার’ মুভিতে বাকি বার্নেসের ব্যাপারে টনি স্টার্ককে সত্যটা জানিয়ে দেয়ায় ম্যিয়লনির তোলার যোগ্য হয়েছেন তিনি, এরকম ধারণা অনেকের থাকলেও ব্যাপারটি অযৌক্তিক। মূলত ম্যিয়লনির তোলার যোগ্যতাটা হলো বাইনারি জিনিস, হয় তোলা যাবে, নইলে না। হাল্ক কিংবা থানোসের মতো মহাশক্তিধরেরা কিন্তু সেটাকে একচুলও নাড়াতে পারেনি। স্টিভের যোগ্যতা ছিল বলেই তিনি নাড়াতে পেরেছিলেন, আর সেই যোগ্যতার কথা সবসময়েই জানতেন থর।
গোটা ইউনিভার্সে সমতা আনার লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া প্রবল পরাক্রমশালী থানোসকে কখনো বর্বর ভিলেনরূপে, আবার কখনো ভগ্নদশায় দেখা গেছে এখানে। সিজিআই মুখোশের আড়ালে থেকেও মার্ভেল ইউনিভার্সের সেরা ভিলেনটিকে আশ্চর্য নৈপুণ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন জশ ব্রোলিন। ঠিক একই কথা খাটে নেবুলার ভূমিকায় অভিনয় করা স্কটিশ অভিনেত্রী ক্যারেন গিলিয়ানের ক্ষেত্রে। এদিকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর সুপারহিরো ক্যাপ্টেন মার্ভেলের ভূমিকায় স্বল্প সময়েই ঝলক দেখিয়েছেন ব্রি লারসন। স্বাভাবিকভাবেই নতুন অ্যাভেঞ্জারদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক কম, তারমধ্যে দিয়েও নজর কেড়ে নিয়েছেন টম হল্যান্ড, চ্যাডউইক বোসম্যান, বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, টেসা থম্পসনেরা। বাইশটি মুভিব্যাপী দীর্ঘ এই সাগার সমাপ্তিতে আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের দেখা মিলেছে। এক অর্থে স্মৃতিতে থাকা মার্ভেলের মুভিগুলোর ওপরে একটা বড়সড় পরীক্ষা নিয়েছে মুভিটি।
এমসিইউ এর এটাই প্রথম মুভি, যেটায় কোনো মিড কিংবা পোস্ট ক্রেডিট দৃশ্য নেই, সবশেষে আয়রন ম্যানের হাতুড়ি চালানোর ক্ষীণ শব্দ শোনা যায় শুধু। অবশ্য ৬ই মে থেকে স্পাইডারম্যান: ফার ফ্রম হোম মুভির ট্রেলারকে পোস্ট ক্রেডিটে দেখানো হচ্ছে। থেরাপি গ্রুপের একজন সদস্যের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন পরিচালক জো রুশো। তাছাড়া মার্ভেল কিংবদন্তী স্ট্যান লির শেষ ক্যামিওটি দেখা গেছে এই এন্ডগেমেই। আবহসঙ্গীতের ক্ষেত্রে খুব আকর্ষণীয় কিছু উপহার দেয়নি মুভিটি। দমবন্ধকরা সাসপেন্সের মুহূর্তে এর অভাব বোধ হয়েছে কিছুটা। অ্যাভেঞ্জারের মূল থিম সং অবশ্য যেকোনো মুহূর্তেই গুজবাম্পস তুলে দিতে সক্ষম।
কেভিন ফাইগি এবং রুশো ভ্রাত্রৃদ্বয়ের পাশাপাশি মুভির সাফল্যের পেছনে ভূমিকা রেখেছেন দুই কাহিনীকার ক্রিস্টোফার মার্কাস এবং স্টিফেন ম্যাকফিলি। বিপুল প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়েননি তারা। জনপ্রিয় চরিত্রগুলোকে ঠিকমতো বিদায় জানানো আর নতুন কাহিনীর সংযোজন ঘটাতে গিয়ে হ-য-ব-র-ল হয়ে যাবার সুযোগ ছিল। তারা হাওয়ার্ড স্টার্ক, দেবী ফ্রিগা কিংবা পেগি কার্টারকে দিয়ে চরিত্রগুলোর আর্ক সম্পূর্ণ করেছেন। অভিনব কাহিনীর সাহায্যে আগের মুভিগুলোর প্রতি হোমেজ দিয়েছেন, দর্শকদেরকে নস্টালজিক করে দিয়েছেন বারবার। তবে হ্যাঁ, এখনো অনেক গল্প বাকি, অনেক ছিন্ন সুতো জোড়া দেয়া বাকি। কিন্তু এন্ডগেমের চেয়ে নিখুঁতভাবে অ্যাভেঞ্জার সাগার সমাপ্তি টানা সম্ভব না। নিয়মিত মার্ভেল সিনেমা উপভোগ করা দর্শকদের কাছে এটা ওয়ান অফ অ্যা লাইফটাইম এক্সপেরিয়েন্স।
কাহিনী গোছানোর চেয়েও সম্ভবত বেশি কঠিন ছিল মুভির কাহিনীকে গোপন রাখা। ২০১৭ সালে ইনফিনিটি ওয়ারের সাথে সাথেই এন্ডগেমের শুটিং শুরু হয়েছিল। সেসময়েই ‘অ্যাভেঞ্জারস (২০১২)’ মুভির কস্টিউমে টম হিডলস্টোন এবং ক্রিস এভান্সের ছবি ছড়িয়ে পড়ে। সেই সময় থেকেই টাইম ট্র্যাভেল, টাইম স্টোন এবং কোয়ান্টাম রিয়্যাম নিয়ে নানা থিওরি ছড়িয়ে পড়ে। একমাত্র রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ছাড়া এন্ডগেমের সম্পূর্ণ স্ক্রিপ্ট জানতেন না কেউই। আর বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচকে মুভির এন্ডিং সম্পর্কে ধারণা দিয়ে রাখা হয়েছিল। মুভির শেষের দিকের দৃশ্যটিকে স্ক্রিপ্টে লেখা ছিল বিয়ের দৃশ্য হিসেবে। তারপরেও মুভিটি থিয়েটারে মুক্তির আগে বিভিন্ন প্লটপয়েন্ট এবং দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছিল ইন্টারনেটে। অবশ্য তার কোনোকিছুই এন্ডগেমের বিশ্বজয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
৩৫৬ মিলিয়ন ডলার বাজেটের মুভিটি মুক্তির প্রথম সপ্তাহান্তেই বিশ্বব্যাপী আয় করে নেয় ১.২ বিলিয়ন ডলার। সবচেয়ে দ্রুততম বিলিয়ন ছোঁয়ার ক্ষেত্রে ইনফিনিটি ওয়ার মুভির রেকর্ড ভেঙে ফেলে অনায়াসেই। মুক্তির ১৩ দিন পর্যন্ত এন্ডগেম বিশ্বব্যাপী আয় করেছে ২৩২০ মিলিয়ন ডলার। ইতিমধ্যেই উঠে এসেছে সর্বকালের সবচেয়ে বেশি আয় করা মুভিগুলোর তালিকার দুই নম্বরে (মুদ্রাস্ফীতির হিসাব ছাড়া)। আইএমডিবিতে এখন পর্যন্ত এর রেটিং ৮.৯/১০, রোটেন টমাটোজে জমা হওয়া ৪৪১টি রিভিউয়ের ভিত্তিতে মুভিটি ৯৫% ফ্রেশ।
চোখধাঁধানো অ্যাকশন সিকোয়েন্সের মোড়কে টানটান উত্তেজনাপূর্ণ কমিক মুভিগুলো বক্স অফিসে রাজত্ব করলেও শিল্পপ্রেমীদের তাচ্ছিল্যের শিকার হয় প্রায়ই। তাই বলে এন্ডগেমকে অন্যান্য কমিক মুভির সাথে মেলালে ভুল হবে। বারো বছর ধরে ৪ মিলিয়ন চরিত্রকে নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই সুবিশাল ইউনিভার্স। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা থ্রোব্যাক মুহূর্তগুলো দর্শককে আনন্দ দিয়েছে, আবার কাহিনীর মারপ্যাঁচ তাদের মগজের নিউরনগুলোকে বনবন করে ঘুরিয়েছে। তাই কিছু তুচ্ছ দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও অ্যাভেঞ্জারস: ইনফিনিটি ওয়ার এবং অ্যাভেঞ্জারস : এন্ডগেম মুভি দুটির কাহিনী সবসময়েই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।